ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম প্রচারের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগে প্রচারে কোনো বাধা নেই। প্রার্থী চূড়ান্ত হলেই কেবল আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করব।
রোববার (২৬ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এই বিষয়ে আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদের ২০০৮ সালের যে আচরণ বিধি আছে, সেটির বিষয় বা লক্ষ্য হচ্ছে প্রার্থীর জন্য। বোঝার চেষ্টা করবেন, মনোনীত প্রার্থী, সম্ভাব্য প্রার্থী, এরা কেউ প্রার্থী নয়। প্রার্থী হচ্ছেন মনোনয়ন দাখিল করা পরে যিনি চূড়ান্ত হবেন। নির্বাচন কমিশনের যে নিযুক্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন। এরপর আপিল হবে। কমিশনে ১০ দিন সময়। এরপর যে সিদ্ধান্ত যাবে, ওই সিদ্ধান্তের পরে রিটার্নিং অফিসার যোগ্য প্রার্থী তালিকা সাজাবেন। এরপর চূড়ান্ত তালিকাটা ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন। এটার তারিখটা হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর।
তিনি আরও বলেন, সেদিন থেকে তাদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগে যে প্রচারণা হবে এগুলোর আমাদের জন্য প্রচারণা নয়। এখন যদি কোনো রাজনৈতিক দল লাঙ্গল নিয়ে, গরু নিয়ে, ইয়ে নিয়ে, পাখি নিয়ে তারা যদি প্রচারণা করেন কোনো রকম বাধা নেই। আমরা নিয়ন্ত্রণ করবো নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তখনই হবেন যখন রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করে বলবেন, আমার এই পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তখন আমরা সেই পাঁচজন প্রার্থীকে নিয়ন্ত্রণ করব। দেখব তিনি বা তারা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে কি না। যদি করে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আরেকজন বলেছেন, তবে আমি জানি না, প্রধানমন্ত্রী না কি গণভবনে একটি মিটিং করেছেন। মিটিং যদি তিনি করে থাকেন, একটা প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কোথায়? কারণ আচরণ বিধিমালা প্রয়োগের সময় তো আমাদের এখনও আসেনি। প্রধানমন্ত্রী কোথায় মিটিং করছেন, কী মিটিং করছেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রার্থী নন। হয়তোবা তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন। উনি একজন প্রার্থী হতে পারেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার পরে। আইনের মূল কথা হচ্ছে, কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। মাইন্ড ইট এগেইন-কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে, আমি যদি প্রার্থী হই আমিও ভঙ্গ করতে পারব না। আর আমার পক্ষে আরেকজন গিয়ে প্রচারণা করে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আরেকজন শোডাউনের কথা বলেছেন, শোডাউন করে দলের নমিনেশন নিয়েছেন। আমাদের কোনো আইনেই বলা নেই যে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার সময় শোডাউন করতে পারবে না, গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে যেতে পারবে না, দলবদ্ধভাবে যেতে পারবে না, আনন্দ উৎসব করতে পারবে না।
কেনার পরেও গত পরশু আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয়েছে-এই বিষয়টি তুলে ধরা হলে সিইসি বলেন, হ্যাঁ, গত পরশুও আচরণ বিধিমালা প্রযোজ্য হয়নি।
তাহলে রাজশাহীর একজন সংসদ সদস্যকে সতর্ক করলেন কোন আইনের বলে-এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই আইন সচিব বলেন, সেটা পরে দেখছি। কাজেই এখন যে শোডাউন হবে, আমাদের আইনটা হচ্ছে যখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে যাবে আইনের ভাষা, যে পরিধি, সেই সীমারেখার মধ্যে থাকার চেষ্টা করব। এখন দাখিলের সময় কী করা যাবে, কী করা যাবে না আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে।
প্রশাসনের রদবদল নিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের রদবদল কে কখন করেছিল? প্রশাসনের রদবদল কোন নির্বাচন কমিশন করেছিল? আমাকে কী একটু বলবেন?
এ সময় ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে হয়েছিল বলে সাংবাদিকরা জানালে সিইসি বলেন, সেটা নির্বাচন কমিশন করেনি। সেটা সরকার করেছে। বিচারপতি লতিফুর রহমান সাহেব করেছেন। লতিফুর রহমান কখনও সিইসি ছিলেন কি না আমি জানি না। লতিফুর রহমান সাহেব ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। সেটা সরকার। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে পার্থক্য আছে।
আপনারা রদবদলের প্রয়োজন মনে করে কি না এই প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, না, প্রয়োজন মনে করি কী, করি না, সেটা আমি জানি না। আমরা যেটা মনে করব সেটা আমরা দেখব। এই ধরনের প্রশ্ন আমি নেব না। আমরা আমাদের নির্বাচনের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করব এবং এখতিয়ারের মধ্যে যেটা আছে সেটা করব। এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে, এখতিয়ার অতিক্রম করে আমরা কোনো কিছু করতে যাব না।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সেনাবাহিনী (সশস্ত্র বাহিনী) নিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। যদি প্রয়োজন মনে করি, চাইলে তারা (সরকার) আমাদের দেবে। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।
সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
ইইউডি/এসআইএ