ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

৫ বছরে এমপি বাবলুর আয় বেড়েছে ৭০০ গুণ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
৫ বছরে এমপি বাবলুর আয় বেড়েছে ৭০০ গুণ  বগুড়া-৭ আসনের এমপি রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী

বগুড়া: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের এমপি হন রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন৷

মাত্র ৫ বছরে তার আয় বেড়েছে অন্তত ৭০০ গুণ।

তার স্ত্রীও কোটিপতি বনে গেছেন৷ একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত তার হলফনামা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে তার জমানো টাকা ছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা। আর চলাফেরার জন্য ব্যবহার করতেন পুরোনো একটি মোটরসাইকেল। এমপি রেজাউল করিম বাবলু বর্তমানে চলাফেরার জন্য দুটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। একটি নিশান এক্সট্রেইল জিপ। অন্যটি ল্যান্ডক্রুজার। দুটির দাম একত্রে ১ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার। সব মিলে বর্তমানে তার সম্পদ ১ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ টাকা।

বাবলুর সংসদ সদস্য হওয়ার আগে পেশা ও আয়ের উৎস: 

সংসদ সদস্য হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনে দেওয়া হলফনামায় রেজাউল করিম বাবলু উল্লেখ করেছিলেন তার পেশা ব্যবসা ও সাংবাদিকতা। তার আয়ের উৎস কৃষি ও ব্যবসা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ৩ হাজার টাকা আর ব্যবসা থেকে ২ হাজার টাকা বার্ষিক আয়।  

অর্থাৎ ওই সময় তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা। তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণও ছিলো ৩০ হাজার টাকা।  ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটর সাইকেল ছিলো তার। এছাড়া বাবলুর কাছে স্বর্ণ ছিল ৬ ভড়ি। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র ছিল দেড় লাখ টাকার।  

অন্যান্য খাতে তার টাকা ছিল ৩০ হাজার। স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে তার কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৪৫ শতক। তিনি অকৃষি জমির আর্থিক মূল্য উল্লেখ করেছিলেন ৪৫ লাখ টাকা। বাবলুর নিজের নামে ৫ লাখ টাকার বাড়ি ছিল। তার কোনো অ্যাপার্টমেন্ট ছিল না। এছাড়া ওই সময় স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ ছিল না।

বাবলু আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কমিশনে দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেন- তার ইট, বালু, সিমেন্টসহ অনলাইন ব্যবসা রয়েছে। বর্তমানে তার ও তার ওপর নির্ভরশীল বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। অর্থাৎ এখন তার মাসে আয় ৩ লাখ ২ হাজার ২৮ টাকা। এই হিসেবে তার আয় বেড়েছে ৭২৪ গুণের বেশি। এবার কৃষি খাতে তার কোনো আয় নেই। বাড়ি ভাড়া থেকে পান ১ লাখ ৮০ হাজার। ইট, বালু, সিমেন্ট ও অনলাইন ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১১ লাখ ১৫ হাজার টাক।  

এমপি হিসেবে প্রাপ্ত আয় ও আনুতোষিক ২৩ লাখ ২৪ হাজার ২২৫ টাকা। বর্তমানে তার নিজ নামে নগদ টাকা রয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। এবার ব্যাংকে তার কোনো টাকা নেই। তিনি ১ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের দুটি বিলাসবহুল জীপ গাড়ি ব্যবহার করেন। ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে। পাশাপাশি হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন তার নামে ১৫ লাখ টাকার একটি এপার্টমেন্ট রয়েছে।  

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেয়া হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদের কথা উল্লেখ না করলেও এবার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আবাসিক ভবন থাকার কথা বলেছেন হলফনামায়।  

এছাড়া তার স্ত্রী নগদ ২ লাখ ৫০ টাকার মালিক। আছে ৩ লাখ টাকার মূল্যের একটি মোটরসাইকেল। স্ত্রী বৈবাহিক সূত্রে ১০ ভরি স্বর্ণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে এই স্বর্ণের কোনো তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি তিনি।  

এবারের হলফনামায় সংসদ সদস্য বাবলুর ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্যমান একই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাত ও স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে কৃষি জমির কথা উল্লেখ করেননি। তবে এবার হলফনামায় তিনি বলেছেন তার ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে।  

জানতে চাইলে এমপি রেজাউল করিম বাবলু জানান, আমার আয়-ব্যয়ের সব হিসাবের ব্যাখা মনোনয়নপত্রের ফাইলে দেওয়া আছে। আপনারা সব সেখানেই পাবেন। আমার কিছু বলার নেই।

উল্লেখ্য, বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনটি বিএনপি তথা ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান দলের গাবতলী উপজেলা শাখার নেতা মোরশেদ মিলটন। সে সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আসনটি বিএনপিশূন্য হয়ে পরে। এখানে আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী ছিল না।  

মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিমকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। ফলে এক রাতের ব্যবধানে ট্রাক প্রতীকে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাবলু।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৩
কেইউএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।