বরিশাল: বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপনকেই প্রচারণার মাঠে সরব ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
বলতে গেলে, বরিশাল-৫ আসনে সাদিক’ই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর উদ্বেগ বাড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষের আপিলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক এই মেয়র দুইবার প্রার্থিতা হারিয়েছেন। সবশেষ উচ্চ আদালতের আদেশে ঈগল প্রতীক পেলেও, আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আদেশের কারণে তিনি এই সংসদ নির্বাচনে আর প্রার্থী থাকতে পারেননি। তবে, এতেও যেন হার মানতে নারাজ সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার অনুসারীরা। সাদিকের অনুসারীরা বলছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পেতে নিয়মানুযায়ী যা যা প্রয়োজন তাই করবেন তারা।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে মাঠের হিসাব পাল্টে যেতে পারে। আর প্রার্থিতা ফিরে না পেলে সাদিকের সমর্থনও যে কোনো প্রার্থীর ভাগ্য পরিবর্তনের নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও সাদিকের চাচা বিপুল ভোটে বিজয়ী বর্তমান সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও তার অনুসারীরা দলের প্রার্থী জাহিদ ফারুককেই পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। সেই হিসেবে নগরের ভোটে নৌকার প্রার্থী ভাগ্য প্রসারিত করেই মাঠে নেমেছেন।
সব মিলিয়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নৌকা প্রতীকেই আস্থা বরিশালবাসীর, সেক্ষেত্রে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। আর যারা দল করেন এবং আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন তারা নৌকার বাইরে অন্য কোনো চিন্তা করতে পারেন না।
যদিও এখন পর্যন্ত প্রচারণার মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাদিক অনুসারীদের কাউকেই দেখা যায়নি, এমনকি হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা কোনো নেতাকেও দেখা যাচ্ছে না প্রচারণায়।
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে জানতে চাইলে, তারা বরাবরই বলে আসছেন, নৌকা প্রতীক দলের হলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা যেহেতু নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দিতামূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সুযোগ দিয়েছেন, তাই তারা সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন। আর এ জন্য সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের পাশে রয়েছেন তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের দপ্তর সেলের দপ্তর প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন। তাকে বিজয়ী করতে সবাই কাজ করছেন এবং করবেন। এখন কেউ যদি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করব।
এদিকে দুদিনের প্রচারণার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার সাথে যারা রয়েছেন, তারা সবাই সদর আসনের বর্তমান সংসদ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নৌকার প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠজন। সেইসাথে সাদিকের চাচা ও বর্তমান সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের অনুসারীরাও রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে।
অপরদিকে প্রচরণার মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপন। নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত এই প্রার্থী দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিজয়ী হবেন তিনি।
যদিও অনেকেই বলছেন, সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের মাঠে শেষ পর্যন্ত না থাকতে পারলে তার সমর্থনটা এই প্রার্থীর ওপরই ভর করবে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কোনো প্রার্থী।
১৯৭৩ থেকে ২০১৮ এর নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল সদর আসন থেকে ১৯৯১ ও ২০১৪ সালের উপনির্বাচন ছাড়া বিএনপি ৭ বার এবং আওয়ামীলীগ ৩ বার ও জাতীয় পার্টি একবার জয়ী হয়েছে। সেই হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনে না এলেও সমর্থকদের ভোট একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। আবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনও বরিশালে সুপরিচিত। তিনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সালিউদ্দিন রিপন বছরজুড়ে বরিশালে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ট্রাস্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদে পাশে রয়েছেন। তাই সব হিসেব মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠে ভোটারদের বাগে আনতে কাজ করতে হবে জয়প্রত্যাশীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ