সিলেট: ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ও কারচুপি, পেশি শক্তির ব্যবহারের অভিযোগ তুলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের ভোট বর্জনকারী চার প্রার্থী। ভোটের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন তারা।
তারা হলেন, গণফোরামের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য (এমপি) মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান (ট্রাক) এবং তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ আবদুর রব (সোনালী আঁশ)।
সোমবার (০৮ জানুয়ারি) নগরের একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান চার প্রার্থী। সেই সময় তারা নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরেন এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালতে যাবেন বলেও জানান। পাশাপাশি তারা এই দাবিতে জনতাকে আন্দোলন করবেন।
ট্রাক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান বলেন, রোববার (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনের দিন যেটি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ একটি প্রহসনের নির্বাচন। আমরা প্রতারিত হয়েছি। এটি কোনো নির্বাচনই ছিল না, তাই আমরা বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের এজেন্টদের মারধর, জোরপূর্বক বের করে দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে টেবিল কাস্টসহ ব্যাপক অনিয়মের কারণে আমরা নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার আগেই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই। পরে দুপুর ২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেই আমরা চারজন। আমরা সবাই রোববারের সিলেট-২ আসনের সব কেন্দ্রের ভোট ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং আবারও নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে দু-একদিনের মধ্যে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবো। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাশাপাশি আমরা আন্দোলনও চালিয়ে যাবো।
গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান বলেন, নির্বাচনের দিন আমরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও ইলেকশন কমিশন থেকে আমাদের বার বার বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। কিন্তু তাদের কথায়-কাজে মিল পাওয়া যায়নি, প্রহসনের নির্বাচন উপহার দেওয়া হয়েছে।
দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেন তিনি। সেই সঙ্গে ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোটের দাবি জানান। নাহলে তারা আইনি লড়াইসহ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, আমাকে একটি সেন্টারে অবরুদ্ধ করে রেখে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা টেবিল কাস্ট করেছেন। আমি বার বার ফোন করেও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি প্রায় দুই ঘণ্টা তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। এরপরই আমরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, আমাদের এজেন্টদের নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা অনেক কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়নি, অনেক কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন বর্জন করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। তাছাড়া প্রহসনের নির্বাচন দেখে আমি নিজেও ভোট দেইনি। তাছাড়া আমাদের এজেন্টরা এই প্রহসনের নির্বাচনে ফলাফল সিটে কোনো স্বাক্ষর করেনি। প্রিসাইডিং অফিসাররা স্বাক্ষর দেখিয়ে থাকলে ভোটের মতো সেটাও জাল করেছেন।
তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক বলেন, আমি একটি সূত্রে জানতে পেরেছি, আগের রাতেই ৩৮টি কেন্দ্রের ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা হয়ে গেছে। আমরা এই ৪ প্রার্থী দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। সেখানকার সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা এখানেও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। একটি প্রহসনের নির্বাচন আমাদের উপহার দেওয়া হয়েছে। আমরা এ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোটের আবেদন করছি। পাশাপাশি আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।
উল্লেখ্য, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সিলেট-২ আসনে নৌকা প্রাতীকে ৭৮ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ট্রাক প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬১টি। জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে ৬ হাজার ৮৭৪, গণফোরাম প্রার্থী মোকাব্বির খান উদীয়মান এক হাজার ৯২২টি এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রব মল্লিক ৯৪৪টি ভোট পান।
বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৪
এনইউ/এএটি