ঢাকা: জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনেও সাধারণ আসনের মতো সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। একইসঙ্গে নারী আসন সংখ্যা বাড়িয়ে অর্ধেকে উন্নীত করার প্রতিও জোর দিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের নিয়ে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন এমন সুপারিশ করে।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বেশকিছু সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরেন।
১. পদ্ধতিটিকে দলীয় নেতাদের অনুগ্রহ নির্ভর টোকেনিজমে পরিণত না করে সংসদে পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
২. সংরক্ষিত আসনেও সাধারণ আসনের মতো প্রত্যক্ষ ভোটের নির্বাচনের বিধান করতে হবে।
৩. সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের দায়বদ্ধতা থাকবে জনগণের কাছে।
৪. এ আসন সংরক্ষণ পদ্ধতি এমন করতে হবে, যাতে কোনো দ্বৈততা (ওভারল্যাপিং) না থাকে।
৫. সাধারণ আসনের মতো সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব হবে সমান।
৬. সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের ভিত্তি হবে নারী রাজনীতিবিদদের যোগ্যতা।
৭. সংরক্ষিত আসনের পদটিকে দলীয় নেতা, বিশেষত দলীয় প্রধানের পৃষ্ঠপোষকতা বা অনুগ্রহ বণ্টনের হাতিয়ারে পরিণত করা যাবে না।
এ বিষয়সমূহকে বিবেচনায় নিয়ে তিন ধরনের প্রস্তাব তুলে ধরে সুজন।
এক. বাংলাদেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করা এবং প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে বাধ্যতামূলক ৫০ শতাংশ নারীকে প্রতিটি মনোনয়ন দেওয়া। এক্ষেত্রে প্রতিটি দলের মনোনীত প্রার্থী তালিকা হবে ‘একজন নারীর পর একজন পুরুষ’ বা ‘একজন পুরুষের পর একজন নারী’ এ ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে। অর্থাৎ একটি রাজনৈতিক দল থেকে যতজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার অর্ধেক হবে নারী। এ ব্যবস্থায় পৃথকভাবে আসন সংরক্ষণের কোনো প্রয়োজন হবে না।
দুই. বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিই বহাল থাকলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ৫০ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়া। এক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে না।
তিন. নারীদের জন্য ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে আসন সংরক্ষণ করা। এ পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের মোট আসনকে তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। একটি নির্বাচনে এ তিন ভাগের এক ভাগকে শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে, যেখানে শুধু নারীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অবশিষ্ট দুই ভাগ নারী-পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পরের নির্বাচনে প্রথম ও তৃতীয় অংশকে নারী-পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে দ্বিতীয় অংশকে নারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। একইভাবে পরের নির্বাচনে তৃতীয় অংশকে নারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় অংশকে নারী-পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে আসন সংরক্ষণ করা হলে তিনটি মেয়াদের নির্বাচনের পর আসন সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োজন নাও হতে পারে। কেননা কোনো সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হয়ে একজন নারী যথেষ্ট যোগ্যতার প্রমাণ রাখাসহ জনকল্যাণমুখী ভূমিকা রাখতে পারলে পরে সাধারণ আসন থেকেও তিনি নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই সংসদে অর্ধেক প্রতিনিধিত্ব নারীদের থাকা দরকার। এখন সংরক্ষিত ৫০টা আসন আছে এটা অনেকটা প্রতীকী। যারা আসেন তাদেরও যোগ্যতা, দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতা সত্যিকার অর্থে হচ্ছে না। তাই যদি হতো তারা পরে সাধারণ আসনে নির্বাচনে আসতো। ভারতের পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এটি নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পরিচায়ক। নারীর ক্ষমতায়ন চাইলে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। এছাড়া ক্ষমতায়ন হবে না। তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে যখন তাদের সংরক্ষিত বলি তার অর্থ তাদের সংরক্ষণের মাধ্যমেই আনতে চাই। তাহলে এটি আরও ভালো হতো যদি ৫০ জনের মধ্যে যদি আরও ভাগ করি যে একজন দলিত নারী, চা বাগানের শ্রমিক, একজন তৃতীয় লিঙ্গ। এ রকম করে যদি ভাগ করে ফেলতে পারি তাহলে হয়তো আরও প্রতিনিধিত্ব হতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৪
ইইউডি/আরবি