নারায়ণগঞ্জ: জেলার বন্দর উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অপর এক প্রার্থী।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযোগ দাখিলকারী প্রার্থী মাহমুদুল হাসান।
এরআগে, সোমবার (১৫ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন তিনি।
মাহমুদুল হাসান সাবেক বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রার্থী, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে করখেলাপীর অভিযোগ ও আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেছেন।
একটি অভিযোগে আতাউর রহমান মুকুলকে করখেলাপী উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীকে সব ধরনের ব্যাংক ঋণ, আয়কর, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য সেবা খাতে দায়মুক্ত থাকতে হবে। মো. আতাউর রহমান (মুকুল) আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। উক্ত প্রতিষ্ঠানের ২০১৩-২০১৪ কর বছর থেকে ২০১৯-২০২০ কর বছর পর্যন্ত ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭২৭ টাকা বকেয়া এবং ২০২০-২০২১ কর বছর থেকে ২০২৩-২০২৪ কর বছর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি। এজন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান করখেলাপী হিসাবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য। যেহেতু মো. আতাউর রহমান (মুকুল) উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক, সেহেতু তিনিও একজন করখেলাপী হিসেবে বিবেচিত।
এমতাবস্থায়, উল্লিখিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আতাউর রহমান মুকুলকে একজন করখেলাপী হিসাবে চিহ্নিত করে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে আইনি কার্যক্রম নেওয়ার অনুরোধ করছি।
আরেকটি অভিযোগে একেএম আবু সুফিয়ানকে মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে তিনি লিখেছেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীকে তার নির্বাচনী হলফনামায় সব ব্যক্তিগত তথ্য নির্ভুল ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করার বাধ্যতা রয়েছে।
এ কে এম আবু সুফিয়ান আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার আই.আর নং-১৪, ০৫ই ডিসেম্বর ২০১৯ ইং সময় ১৫ টা ৩০ ধারা: ১৯-৯ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন তৎসহ ১৪৩/১৪৪/১৪৯/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৪, পেনাল কোড ১৮৬০ মামলার বিবরণটি তার জমা করা মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করেননি, যা নির্বাচনী আইনের পরিপন্থি।
এমতাবস্থায়, উল্লেখিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ কে এম আবু সুফিয়ানকে একজন নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে আইনি কার্যক্রম নেওয়ার অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিলকারী প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমি অভিযোগ দিয়েছি এবং সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছি। যেহেতু একজন করখেলাপী ও আরেকজন তথ্য গোপনকারী আমি তাদের প্রার্থিতা বাতিল চাই।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, আমি এটা শুনেছি। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আমি নেই। আর যেহেতু মালিকানায় আমি নেই আমার সঙ্গে এ অভিযোগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অভিযোগটি মিথ্যা।
অভিযোগের বিষয়ে আরেক প্রার্থী একেএম আবু সুফিয়ান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু জানা নেই তাই এ বিষয়ে এখনই আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।
বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থীসহ ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সোমবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তারা মনোনয়নপত্র জমা দেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল, জাতীয় পার্টির নেতা ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এবং তার ছেলে মাহমুদুল হাসান।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানিয়েছেন, আগামী বুধবার বেলা ১১টায় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাচাই অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় প্রত্যেক প্রার্থী ও তার সমর্থনকারী এবং প্রস্তাবকারীকে উপস্থিত থাকতে হবে। ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল এবং ২১ এপ্রিল আপিল নিষ্পত্তি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। আগামী ৮ মে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা একলাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
এমআরপি/এসআইএ