ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

দ্বিকক্ষ সংসদে সায় কম বামদের, ‘মতৈক্য’ হলে সমর্থন থাকবে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
দ্বিকক্ষ সংসদে সায় কম বামদের, ‘মতৈক্য’ হলে সমর্থন থাকবে

ঢাকা: দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ। এখন কেবল এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে অনেকে বলছেন, দ্বিকক্ষ সংসদ হলে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারসাম্য থাকবে।

তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে অধিকাংশ বামপন্থি রাজনৈতিক দল এটি সমর্থন করছে না। যদিও কেউ কেউ বলছে, মতৈক্যের ভিত্তিতে হলে তাতে তাদের সমর্থন থাকবে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বিষয়ে সঙ্গে সংবিধান সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করার পর দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ সমর্থন করছে না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির(সিপিবি) নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর এই ধরনেরই অবস্থান। ওই দলগুলোও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না। এ জোটের দলগুলো সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমেই জনমতের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব বলে ওই দলগুলো মনে করে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গুরুত্ব আছে বলে মনে করি না। যেখানে ফেডারেল সরকার আছে, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আছে সেখানে সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হতে পারে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রয়োজন হয়। আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতায়ও এটা অপ্রয়োজনীয়।  

তিনি বলেন, সিপিবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে আইন সভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাঠানোর ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলে আমাদের পার্টি সিপিবি মনে করে। আর এই পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থেই জনমতের প্রতিফলন ঘটবে বলে আমরা মনে করি।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এই জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলগুলো এ ধরনের সংসদের পক্ষে নয়। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবিধান সংস্কারের বিষয়েও ওই দলগুলোর সমর্থন নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এই অবস্থায় বিষয়টি সম্পর্কে এই জোটের নেতারা প্রকাশ্য মতামত বা বক্তব্য দিতে চাচ্ছেন না।

মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়ার্কার্স পার্টির দায়িত্বশীল এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে আমরা এই বিষয়ে কিছু বলবো না, কোনো মন্তব্য করবো না। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। আর সেটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

১৪ দল ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটা করার পক্ষে দলটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ সমর্থন করি। তবে এটা করতে সব দলের ঐকমত্য আসা প্রয়োজন। জোরজবরদস্তি করে করা যাবে না। যতটুকু করা সম্ভব এই সরকারের ততটুকু করা উচিত। বাকিগুলো নির্বাচিত সরকারের কাছে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
এসকে/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।