বুধবার (০৩ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে ৯ কেন্দ্রের ৫৯ কক্ষে। এর আগে মঙ্গলবার (০২ অক্টোবর) বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছান নির্বাচনী কর্মকর্তারা।
পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু নৌকা প্রতীক নিয়ে মোকাবেলা করবেন তিন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর।
জগ প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেল, মোবাইল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন এবং নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউস সুন্নাহ চৌধুরী নার্জিস।
ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যতিত রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন করছেন না অন্য প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে বিএনপি নার্জিসকে প্রথমে তাদের প্রার্থী দিলেও তিনি দলীয় মনোনয়ন ফিরিয়ে দেন। কেননা, এ পৌরসভায় দলের চেয়ে গোষ্ঠীর প্রার্থীকে মানুষ প্রাধান্য দেন বেশি। যে কারণে প্রতীক নয়, ব্যক্তি ইমেজে চার প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে-এমন ধারণা দেন স্থানীয়রা।
গোলাপগঞ্জ প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। পৌরসভায় যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও অবকাঠামো থাকা দরকার, তা নেই। যে কারণে ভোটাররা বিগত দিনের উন্নয়ন হিসেব-নিকেশ করেই কাঙ্খিত প্রার্থীকে সিল মারবেন বলে জানিয়েছেন।
ভোটারদের অনেকে জানান, অর্থবৃত্ত ও প্রভাব প্রতিপত্তি এবং গোষ্ঠীর ভোট বিবেচনায় চার প্রার্থীই সমানে সমান। সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করায় গোষ্ঠীর পাশাপাশি রয়েছে দলের ভোট। একইভাবে বিগত দিনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিনের এলাকায় রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। আর সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে নার্জিসের ভোটের আধিপত্য রয়েছে ৩টি ওয়ার্ডে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাবেল প্রবাসী হয়েও এলাকায় পরিচিতি অর্জন করেছেন আগে থেকেই। যে কারণে ভোটের মাঠে চার প্রার্থীর কেউই ফেলনার নয় মনে করেন স্থানীয়রা।
এসব কারণে সদ্য প্রয়াত মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরীর উত্তরসূরি হয়ে কে বসছেন পৌরসভায় মেয়রের মসনদে। তা দেখার অপেক্ষায় কেবল ক্ষণ গণনার পালা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ২১ হাজার ৬৩২ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৯৫৮ জন এবং নারী ভোটার ১০ হাজার ৬৭৪ জন।
পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রে ৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রগুলোতে ৫৯টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করবেন ৫৯ সহকারী পুলিং কর্মকর্তা ও ১১৮ জন পুলিং পার্সন।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা করেছে। ভোটগ্রহণে নিয়োজিত থাকবেন ১৮৬ জন প্রিজাইডিং, পুলিং কর্মকর্তা ও পুলিং পার্সন।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৯টি কেন্দ্রের জন্য ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে র্যাবের ৪টি টহল টিম, পুলিশের ৩টি স্ট্রাইকিং টিম, একটি মোবাইল টিমের পাশাপাশি প্রতি কেন্দ্রে ১৪ জন পুলিশ ও ২০ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য কর্তব্য পালন করবেন। এছাড়া একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে চষে বেড়াবেন। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে কমিশনের ৩ সদস্যের পর্যবেক্ষক টিমও মাঠে থাকবে।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপলুকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রয়াত সিরাজুল জব্বার চৌধুরী।
গত ৩১ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরী মৃত্যুবরণ করায় মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। শূন্য পদে উপ-নির্বাচনে মেয়র হতে লড়ছেন ৪ প্রার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮
এনইউ/আরবি/