রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় প্রার্থীদের উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী, সব থেকে বেশি বাৎসরিক উপার্জনশীল প্রার্থী বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু। তিনি একজন ব্যবসায়ী হয়ে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ৬ কোটি ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৪ টাকা।
বেশি সম্পদশালী প্রার্থীর তালিকায় বরিশাল-২ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী এম মোয়াজ্জেম হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। তার বছরে আয় ১ কোটি ৭০ লাখ ৫ হাজার ৪৯৫ টাকা হলেও অস্থাবরের মধ্যে ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৮ টাকার সম্পত্তি ও ২০ তোলা অলংকার রয়েছে। তার স্ত্রীর ৬ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৩৫১ টাকার সম্পত্তি ও ৩০ তোলা অলংকার রয়েছে। স্থাবরের মধ্যে ২৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৪ টাকার সম্পত্তি ও তার স্ত্রীর ২ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৫ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। যা এ আসনের সবার থেকে বেশি। তবে তার মোট দায় রয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৩২ টাকার।
বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। তিনি কৃষিখাত, বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া ও ব্যবসা থেকে তার বছরে আয় ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ২২২ টাকার সম্পত্তি ও তার স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৪ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার ২ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৮ টাকার ও তার স্ত্রীর ৩০ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যৌথ মালিকানার দু'টি পুরনো বাড়ির একাংশ রয়েছে। এর আনুমানিক মোট মূল্য ৫ লাখ টাকা হবে।
বরিশাল-৬ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী তালুকদার (ফারুক) পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার বাৎসরিক আয় ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭২ টাকা ও তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ টাকা। ৩২ কোট ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৮শ’ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। প্রার্থীর নিজের এবং তার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ৬১০ ‘ টাকার রয়েছে। প্রার্থীর নিজের ২৬ কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৭ টাকার ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। দায়ের খাতায় ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৪৬ টাকার লোন রয়েছে।
বরিশাল-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আতিকুর রহমান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাত থেকে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৩ টাকা। অস্থাবরের মধ্যে রয়েছে ১৫ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৮ টাকার সম্পত্তি ও তার স্ত্রীর ৩০ ভরি অলংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ২ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে। দায়ের ক্ষেত্রে চারটি লোনে মোট ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৩ টাকা দেখিয়েছেন।
এদিকে কোটি টাকার ওপরে সম্পদের মালিক রয়েছেন বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির মো. মজিবর রহমান সরওয়ার পেশায় ব্যবসায়ী হয়ে তিনি বছরে মোট ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকার আয় দেখিয়েছেন। তার ২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও ৫০ তোলা সোনা এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে।
বরিশাল-১ আসনে বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন পেশায় ব্যবসায়ী হয়ে বছরে আয় দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার।
বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহে আলম পেশায় ব্যবসায়ী। প্রার্থী শাহে আলম বছরে আয় ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৭ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ আছে তার। এই আসনে বিএনপির সৈয়দ শহিদুল হক জামাল পেশায় পরামর্শদাতা। তার বছরে আয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ২শ’ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকার সম্পদ আছে তার। এ আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদের প্রায় দেড়কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির সেলিমা রহমান পেশায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫০ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ রয়েছে তার। এই আসনে বিএনপির অপর প্রার্থী জয়নুল আবেদীন নিজেকে আইনজীবী উল্লেখ করে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। বিকল্পধারার এনায়েত কবির পেশায় ব্যবাসায়ী। তার বছরের আয় ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। স্থাবর-অস্থাব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। এরমধ্যে ৩ কোটি টাকার তিনটি অ্যাপার্টমেন্টই রয়েছে তার।
বরিশাল ৪ আসনে আওয়ামী লীগের পঙ্কজ নাথ পেশায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ১৭ টাকা ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ৬ লাখ ১৩ হাজার ৬০৬ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার দেড়কোটি টাকার ওপরে সম্পদ রয়েছে।
বরিশাল-৬ আসনে জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতনা পেশায় ব্যবসায়ী। তার বাৎসরিক আয় ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। এছাড়াও ১শ' ভরি অলংকার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার।
বরিশাল-৬ আসনে বিএনপির আবুল হোসেন খান ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার।
এদিকে ৩ লাখ টাকারও কম বাৎসরিক আয় দেখিয়েছে ১৩ জন। এরমধ্যে বরিশাল-১ আসনে দুবাই প্রবাসী জাকের পার্টির মো. বাদশা মিয়া, ইসলামী আন্দোলনের মো. রাসেল সরদার,একই দলের বরিশাল-২ আসনের মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ আলম মিঞা, এনপিপির সাহেব আলী, বরিশালের ৪ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাহাবুবুল আলম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রুহুল আমিন, বরিশাল-৫ আসনে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আবদুস ছাত্তার, বরিশাল-৬ আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) খন্দকার মাহাতাব উদ্দিন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের এ কে এম নুরুল ইসলাম, গণফোরামের মো. ফোরকান আলম খান, গণফোরামের হিরণ কুমার দাস রয়েছেন।
অপরদিকে বরিশাল-৩ আসনে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মো. নুরুল ইসলাম (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও বরিশাল-৫ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শামীমা নাসরিন (অবসর প্রাপ্ত ব্যংক কর্মকর্তা) হলফনামায় হলফনামায় বার্ষিক কোনো আয়ের কথা যেমন উল্লেখ করেননি, তেমন স্থাবর ও অস্থাবর কোনো সম্পত্তির কিছুই উল্লেখ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৮
এমএস/এএটি