যাদের প্রত্যেকেরই গেল পাঁচ বছরে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। পাশাপাশি বেড়েছে বাৎসরিক আয়ের পরিমাণও।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় প্রার্থীদের উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী, বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির (জাপা) নাসরিন জাহান রতনা পেশায় ব্যবসায়ী হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় বাৎসরিক আয় ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬ টাকা দেখিয়েছেন। যা দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা ছিল ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে তিন গুণ।
এছাড়া বর্তমান হলফনামা অনুযায়ী একশ’ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও তিন কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ২৯৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রার্থীর নিজের এবং তার স্বামীর নামে ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৫৬২ টাকার সম্পদ রয়েছে। আর দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তখনও তার একশ’ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। তবে সম্পদ ছিল কম, তখন প্রার্থীর নিজের নামে ছিল দুই কোটি দুই লাখ ২২ হাজার ১৮০ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং তার স্বামীর নামে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার ১২০ টাকার সম্পদ।
বর্তমানে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া একটি ফ্লাট ছাড়াও প্রার্থীর নিজের নামে ৩৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৬৭ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ রয়েছে এবং পৈত্রিক সূত্রে ৩০ কাঠা জমি ছাড়া প্রার্থীর স্বামীর নামে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৯১৭ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। বিগত নির্বাচনী হলফনামাও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া একটি ফ্লাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও সে সময় প্রার্থীর নিজের নামে ৩৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৬৭ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং পৈত্রিক সূত্রে ৩০ কাঠা জমি ছাড়া প্রার্থীর স্বামীর নামে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৯১৭ টাকার স্থাবর সম্পদ ছিল। এই হিসেবে যদিও কোনো পরিবর্তন ঘটেনি স্থাবর সম্পত্তিতে।
বর্তমানে দায়ের খাতায় এক কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে প্রার্থীর এবং বিগত নির্বাচনেও এক কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার টাকার ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের পঙ্কজ নাথ পেশায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ১৭ টাকা ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ছয় লাখ ১৩ হাজার ৬০৬ টাকা। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামার হিসেব অনুযায়ী তার মোট আয় ছিল ২১ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৫ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ছিল দুই লাখ ৮৮ হাজার ৩৭২ টাকা।
তার আয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদেরও পরিমাণ। বর্তমান হলফনামায় পঙ্কজ নাথ দেখিয়েছেন এক কোটি ৩২ লাখ আট হাজার ৪৮৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও বিয়ের উপহার হিসেবে ৬০ তোলা স্বর্ণালঙ্কার এবং তার স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার ২২ টাকার অস্থাবর সম্পদ। আর বিগত হলফনামায় ছিল ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও বিয়ের উপহার হিসেবে ৬০ তোলা স্বর্ণালঙ্কার এবং স্ত্রীর নামে সাত লাখ ১১ হাজার ৩১৩ টাকার সম্পদ।
অপরদিকে, স্থাবর সম্পদের মধ্যে বিগত নির্বাচনী হলফনামায় নিজের নামে ১৯ লাখ ২৪ হাজার টাকার প্লট এবং স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৯১৩ টাকা ফ্লাটের কথা উল্লেখ করেছেন। আর বর্তমানে নিজের নামে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার প্লট, ৩তলা একটি ভবন এবং স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৯১৩ টাকা ও ফ্লাটের কথা উল্লেখ করেছেন।
দায়ের ক্ষেত্রে বিগত নির্বাচনে ২৩ হাজার ৬৭৯ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করলেও বর্তমানে আট লাখ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন।
বরিশাল-৩ আসনে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান পেশা হিসেবে বর্তমান হলফনামায় কিছু না উল্লেখ করলেও বাড়ি ভাড়া ও এমপি হিসেবে মোট ভাতাসহ বছরে তার আয় দেখিয়েছেন ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৪০ টাকা। যা বিগত নির্বাচনের সময় ছিল চার লাখ আট হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। একইভাবে তার কয়েকগুণ বেড়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ।
বর্তমানে অস্থাবরের মধ্যে রয়েছে ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৭ টাকার সম্পত্তি ও ২০ তোলা অলঙ্কার এবং তার স্ত্রীর ৩১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৫ টাকার সম্পত্তি ও ৩০ ভরি অলঙ্কার। আর দশম নির্বাচনী হলফনামায় তার নিজের অস্থাবরের মধ্যে ছিল চার লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পত্তি এবং তার স্ত্রীর নামে চার লাখ ২৯ হাজার ৫শ’ টাকার সম্পত্তি।
বর্তমানে স্থাবর সম্পদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌথভাবে আবাসিক দালান রয়েছে, যার মূল্যে একজনের ভাগে ৩০ লাখ ৭২ হাজার ৬শ’ টাকা দেখানো হয়েছে। বিগত সময়েও স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথভাবে আবাসিক দালান দেখানো হয়েছিল এবং যৌথভাবে অকৃষি জমি, যার মূল্যে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
দায়ের ক্ষেত্রে বিগত হলফনামা অনুযায়ী ২০ লাখ ৬২ হাজার ৬শ’ টাকা ঋণ ছিল, আর বর্তমানে হাউজি বিল্ডিং ফিন্যান্স ও দু’টি ব্যাংকে ২৪ লাখ ১০ হাজার ৮৬৮ টাকা লোন রয়েছে এই প্রার্থীর।
এদিকে, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে কৃষিখাত, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা থেকে তার ও তার ওপর নির্ভরশালীদের বছরে আয় দুই কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ টাকা। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী কৃষিখাত, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র/ব্যাংকে আমানত থেকে তার বছরে আয় ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৮ টাকা।
বর্তমানে প্রার্থীর নিজের তিন কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ২২২ টাকার ও তার স্ত্রীর নামে তিন কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীর ছিল এক কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৪ টাকার সম্পদ ও তিন হাজার ৫শ’ মার্কিন ডলার এবং তার স্ত্রীর নামে ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ২১২ টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছিল।
বর্তমানে প্রার্থীর দুই কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৮ টাকার ও তার স্ত্রীর ৩০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। ২০১৪ সালের হিসেবে প্রার্থীর ছিল এক কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার ৪৯০ টাকার ও তার স্ত্রীর চার লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যৌথ মালিকানার দু’টি পুরোনো বাড়ির একাংশ উভয় নির্বাচনের হলফনামায়ই উল্লেখ করেছেন প্রার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৮
এমএস/আরবি/