নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো তালিকায় দেখা গেছে-বাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন-রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে প্রার্থী ঘষামাজা করেছেন।
বিএনপির চারজন প্রার্থী এখানে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মেহেদী হাছান নামের এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দুই প্রার্থী হলেন- আব্দুল খালেক ও রফিকুল ইসলাম সিকদার। এদের দু’জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে যথাক্রমে মামলার তথ্য গোপন ও আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়ার কারণ দেখিয়ে।
এ আসনে মোট ১০ মনোনয়নপত্র দাখিলকারী মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবি তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ জামাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রেজুয়ান ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেসমীন নুর বেবীকে হলফনামা নোটারি না করা ও ২শ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সংযোজন না করার কারণ দেখিয়ে, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র প্রার্থী কেএম জাবিরকে আয়কর রিটার্নের ফটোকপি ও সার্টিফায়েড কপি জমা দেওয়ায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কবির হোসনকে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক প্রমাণ না দেখাতে পারার কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
আবার টাঙ্গাইল-৮ আসনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিয়ার মনোনয়নপত্রটি দলের মনোনয়নপত্রে নিজের নাম ও আসন নম্বর ফ্লুইড দিয়ে মুছে পরিবর্তনের কারণে দেখিয়ে বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এই আসনে নয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকীকে ঋণখেলাপের কারণ দেখিয়ে, স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়াকত আলীকে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক প্রমাণপত্র না দেখাতে পারার কারণ দেখিয়ে এবং অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলামকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে লাভজনক পদে থাকার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় পার্টির কাজী আশরাফ সিদ্দিকীকে ঋণখেলাপের কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা জেলা প্রশাসক।
এখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জোয়াহেরুল ইসলাম, কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী কুড়ি সিদ্দিকী, দলটির অপর প্রার্থী হাবিবর রহমান তালুকদারের (খোকা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী সফি সরকারের মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে।
এছাড়াও ‘ঠুকনো’ সব কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সেসব ভুল সংশোধনযোগ্য। গত ১০ নভেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
একটি পরিপত্র জারি করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল-ছোটখাটো ত্রুটির জন্য কোনো মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। যদি বাছাইয়ের সময় এমন কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি নজরে আসে যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব, তা হলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে।
এই নির্দেশনা সত্বেও প্রার্থীর স্বাক্ষর নেই, টিপসই নেই, স্ট্যাম্প সংযোজন না করা, শিক্ষাগত যোগতার সনদ না দেওয়া, আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়া ইত্যাদি কারণেও মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ বিষয়গুলোর আইনি ভিত্তি নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তারা বলেন-এটা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ঠিক হয়নি। কেননা, ছোটখাটো ভুলের জন্য কারো মনোনয়নপত্র বাতিল না করে প্রার্থীকে ডেকে এনে সংশোধন করিয়ে নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। তারা কেন সেটি করতে পারেননি, সেটা বলা যাচ্ছে না। প্রার্থীরা আপিল করলে রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তই টিকবে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি নির্দেশনা সঠিকভাবে না মানার কারণেই দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যেন-তেন কারণে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। অন্যথায় ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হতো না। সে সময় নামের বানানের সামান্য ভুলের জন্যও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল।
এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশজুড়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে-রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা জেলা প্রশাসকদের ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে ব্রিফ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আপিলে সবার প্রতি মেরিট দেখে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। কোনো প্রকার পক্ষপাত করা হবে না।
২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি।
ইতোমধ্যে ৩১৮ জন প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছেন। বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপিল আবেদন নেওয়া হবে। ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন।
৩৯টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে এবার ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি ও স্বতন্ত্র ৪৯৮টি।
আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর।
** ঋণ খেলাপের দায়েই বেশিরভাগ মনোনয়ন বাতিল
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
ইইউডি/আরএ