সম্প্রতি ঢাকা শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন ডা. আব্দুল আজিজকে দেওয়া ছুটির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, ডা. আব্দুল আজিজকে ব্যক্তিগত কারণে আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৭ দিন ছুটি মঞ্জুর করা হলো।
জানা যায়, শিশু হাসপাতালের শৃঙ্খলা ও সাধারণ আচরণ অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। যদিও এ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে।
ছুটি প্রসঙ্গে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি আবার পরিচালকের পদে অধিষ্ট হতে পারবেন। সংসদ সদস্য পদে জয়ী হলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন।
অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ শিশু হাসপাতালের পরিচালকের পাশাপাশি শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এসব পদে বহাল থেকেই তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিধান সম্পর্কে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) এ উল্লেখ রয়েছে, প্রজাতন্ত্রের বা কোন সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, ‘লাভজনক পদ’ অর্থ প্রজাতন্ত্র কিংবা সরকারি সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের ৫০% এর অধিক অংশীদারিত্ব সম্পন্ন কোম্পানিতে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত কোন পদ বা অবস্থান। এছাড়া, প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোন চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসর গমন করেছেন এবং উক্ত পদত্যাগ বা অবসর গমনের ৩ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে তাহলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি ১৯৭৫ সালে জারি করা একটি অধ্যাদেশ দিয়ে গঠিত। এ হাসপাতালের বেতন-ভাতা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বাৎসরিক অনুদানের প্রথম কিস্তি ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা গত ১৭ সেপ্টম্বর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ হাসপাতালের বেতন খাতে চলতি অর্থবছরের মোট ৩০ কোটি টাকা বাজেট রয়েছে।
আরও জানা গেছে, নির্বাচনে দেওয়া ডা. আব্দুল আজিজ তার হলফনামায় বেতনভাতা থেকে আয় দেখিয়েছেন। হলফনামায় চাকুরি থেকে বাৎসরিক ১২ লাখ ৩০ হাজার ৭৪২ টাকা আয় হয় বলে উল্লেখ করেন।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সূত্রে আরো জানা যায়, যেহেতু রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল সরকারি সাহায্যপুষ্ট হলেও এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। তাই এটি পরিচালনায় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হয়। বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা বোর্ড দ্বারা হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে সেই বোর্ডটি আইনত বৈধ নয়। কারণ এ বোর্ডটি বাতিল একটি অধ্যাদেশ দিয়ে গঠন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক বাংলানিউজকে জানান, ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাসপাতাল পরিচালনায় একটি অধ্যাদেশ জারি করে। যদিও পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার সেই অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়। ২০১৬ সালে গঠিত হাসপাতালের বর্তমান ব্যবস্থাপনা বোর্ড ওই বাতিলকৃত অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে।
সর্বোপরি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিধান অনুসারে তিনি (অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজীজ) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অযোগ্য প্রার্থী। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বর্তমানে নির্বাচনী গণসংযোগের কাজেরায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এমএএম/এনটি