ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

আঙুলের ছাপে পরিচয় শনাক্ত হবে জেলাতেই

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
আঙুলের ছাপে পরিচয় শনাক্ত হবে জেলাতেই

ঢাকা: কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হারিয়ে গেলে কিংবা এনআইডি নম্বর সংরক্ষিত না থাকলেও এখন থেকে জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে চাহিদা মোতাবেক সেবা পাওয়া যাবে। কেননা, আঙুলের ছাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত হবে জেলাতেই।

ফলে জীবিত ব্যক্তি মৃত হিসেবে দেখালে কিংবা অন্য কোনো সেবার জন্য পরিচয় শনাক্ত করতে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধান কার্যালয়ে আসার প্রয়োজন হবে না।

এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, জেলা নির্বাচন অফিস আগে আঙুলের ছাপ চিহ্নিত করার ব্যবস্থা ছিল না। সম্প্রতি আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে কোনো ব্যক্তির যদি এনআইডি নম্বর না থাকে কিংবা এনআইডি নম্বর সংরিক্ষত বা মনেও যদি না থাকে, তবু তিনি সেবা নিতে পারবেন।

আঙুলের ছাপ ম্যাচ করার সিস্টেম জেলায় থাকার কারণে এমন কোনো ব্যক্তি এলে তাকে আঙুলের ছাপ নিয়ে নিমিষেই আমরা শনাক্ত করতে পারি। এ ব্যবস্থা এখন থেকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে। আগে ব্যক্তি শনাক্তকরণে এ ব্যবস্থা শুধু ঢাকায় ছিল। এখন ঢাকা মহানগরের সব থানা নির্বাচন অফিস ও সব জেলা নির্বাচন অফিসে সৃষ্টি করা হয়েছে।

মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, কোনো ব্যক্তির এনআইডি যদি হারিয়ে যায়, সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে কিংবা জীবিত থাকা সত্ত্বেও ভুলে মৃত হিসেবে ইসির সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, এসব ক্ষেত্রে সব সেবা তিনি ওই ব্যবস্থার কারণে জেলাতেই পেয়ে যাবেন।

এদিকে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জীবিত ব্যক্তির ভোটার তালিকায় মৃত স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কারো এনআইডি না থাকলে কিংবা এনআইডি নম্বর মনে না থাকলেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নিজেকে শনাক্ত করে নিয়ে উপজেলা কার্যালয়ে গেলেই পুনরায় জীবিত স্ট্যাটাসে ফেরত আসতে পারবেন।

গত ৮ আগস্ট ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মাঠ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যেসব জীবিত ভোটারের স্ট্যাটাস ভুল করে ‘মৃত স্ট্যাটাসে’ রয়েছে, সেসব ভোটারের স্ট্যাটাস ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর ১০ বিধিতে উল্লেখিত সময়কাল ব্যতিরেকে (নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত) রোল ব্যাক কার্যক্রম, সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের দেওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে রোল ব্যাক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে অনুমোদন করতে হবে। এ কার্যক্রম সম্পন্নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ভোটার যেন হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন সিইসি।  

ভোটার তালিকা প্রণয়ন বা ভোটার করার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা। এতদিন স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হতো। কখনো কখনো ঢাকায় কমিশনের কাছেও পাঠানো হতো। এতে ভুক্তভোগী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় কিংবা ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে দিনের পর দিন ঘুরতেন।  

এনআইডির পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যেহেতু ভোটার করার ক্ষমতা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে, তাই ভোটার মৃত কী জীবিত, সেটা নির্ধারণ করার এখতিয়ার প্রমাণ সাপেক্ষে তারই থাকা উচিত। তাই তার হাতেই এ এখতিয়ার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিইসি সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। ফলে জীবিত ভোটার মৃত দেখালে এখন থেকে উপজেলা কার্যালয়ে আবেদন করলে কম সময়েই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।  

স্ট্যাটাস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে উপজেলায় ভোটার হয়েছেন, সেই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়েই যেতে হবে। তবে যদি সংশ্লিষ্ট উপজেলায় বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এলাকায় কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়, তবে ভোটের ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত স্ট্যাটাস পরিবর্তন করা যাবে না। শুধু স্ট্যাটাস পরিবর্তন নয়, নির্বাচন চলাকালীন কোনো ধরনের সংশোধন, স্থানান্তর করা যাবে না। এ সময় নতুন ভোটার হওয়ার কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।  

এ বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, মানুষের অনেক ভোগান্তি হতো আগে। আমরা এজন্য ব্যক্তি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা জেলাতেই করেছি। তাই কারো আঙুলের ছাপ মিলে গেলেই শনাক্ত হয়ে যাবেন, তিনি জীবিত। তাই এজন্য আর ঢাকায় আসতে হবে না। মাঠ পর্যায়েই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।  

বর্তমানে ইসির ভোটার সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকের স্ট্যাটাস জীবিত থাকার পরও মৃত দেওয়া আছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো সেবা নিতে গেলে বিপাকে পড়ছেন। কিংবা কারো এনআইডি বা এনআইডি নম্বর সংরক্ষিত না থাকলে সেবা নিতে গেলে ভোগান্তির কোনো শেষ ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।