ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কুসিক ভোট

প্রাকৃতিক কাজে গেলেও দ্রুত ভোটকক্ষে ফিরতে হবে এজেন্টদের

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
প্রাকৃতিক কাজে গেলেও দ্রুত ভোটকক্ষে ফিরতে হবে এজেন্টদের

ঢাকা: আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে প্রার্থীর এজেন্টদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে এজেন্টরা খাবার খাওয়া বা অন্য কোনো অজুহাতে ভোটকক্ষের বাইরে যেতে পারবেন না।

তবে জরুরি বা প্রাকৃতিক কাজে বাইরে গেলেও দ্রুত ফিরে আসতে হবে।

নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান।

আগামী ১৫ জুন কুসিকের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রার্থী ও তার এজেন্টদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা
মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের যোগ্য একজন ব্যক্তিকে তার নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ না করলে তিনি নিজেই তার নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে গণ্য হবেন।

একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লিখিতভাবে যেকোনো সময় নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন। নির্বাচনী এজেন্ট বাতিল হলে অথবা নির্বাচনী এজেন্ট মৃত্যুবরণ করলে উক্ত প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দান করতে পারবেন। নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ (ফরম-‘জ’ অনুসারে) বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ২৫ এর উপবিধি (১) অনুসারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার নির্বাচনী এজেন্ট ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার তালিকাভুক্ত ভোটারদের মধ্য থেকে একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবেন। উপবিধি (২) অনুসারে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের জন্য নিয়োগকৃত পোলিং এজেন্টের এক কপি ছবিসহ নিয়োগপত্র ফরম ‘জ-১’ এ দাখিল করবেন।

পোলিং এজেন্ট নিয়োগ যদি বাতিল হয় কিংবা পোলিং এজেন্ট মৃত্যুবরণ করেন তবে ওই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট অন্য কোনো ব্যক্তিকে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করে অনুরূপ নিয়োগ দান সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

পোলিং এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে ছবি ছাড়া ভোটার তালিকা নিয়ে ভোট কক্ষের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করে ভোটগ্রহণ কার্যাদি অবলোকন করতে পারবেন এবং ভোটারকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সহায়তা করবেন। তবে যদি কোনো পোলিং এজেন্ট অনুপস্থিত থাকেন বা কোনো সময় ভোটকেন্দ্র থেকে চলে যান, তা হলে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম কোনোক্রমেই বন্ধ থাকবে না।

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফরম ‘জ-২’ অনুসারে পোলিং এজেন্টের উপস্থিতির রেকর্ড রাখবেন। কোনো পোলিং এজেন্ট বিশেষ প্রয়োজনে ভোটকক্ষের বাইরে গেলে এবং আবার প্রবেশ করলে তাও ফরম-জ-২ এ রেকর্ড করতে হবে।

পোলিং এজেন্টরা তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে উপবিষ্ট থেকে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা কোনোভাবেই ভোটদান গোপনকক্ষে যেতে পারবেন না। এমনকি ভোটগ্রহণ চলাকালে ঘন ঘন বাইরেও যেতে পারবেন না। জরুরি বা প্রাকৃতিক কোনো কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে যথা সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে ফিরে আসতে হবে। তবে পথিমধ্যে কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন না।

খাবারের প্রয়োজন হলে সকাল বেলা আসন গ্রহণের প্রাক্কালেই খাবার নিয়ে আসতে হবে। খাবারের জন্য বা খাবারের অজুহাতে কক্ষের বাইরে যেতে পারবেন না। বিষয়টি আগেই প্রার্থী, তার নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের জানিয়ে দিতে হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগ থেকে কোনো পোলিং এজেন্ট বাইরে যেতে পারবেন না। কোনো পোলিং এজেন্ট বা নির্বাচনী এজেন্ট ভোটকক্ষে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রিজাইডিং অফিসার এর নিশ্চয়তা বিধান করবেন।

এ নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচজন প্রার্থী।

এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এ সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া ‘হিজড়া’ ভোটার রয়েছে দুজন।

ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৮৯৪ জন।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছরের ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।

২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনেও ২০১২ সালে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরের বার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

দু’টি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।