ঢাকা: বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচিতে নাগরিকদের সাড়া অপেক্ষাকৃত কম মিলছে। এক্ষেত্রে লক্ষমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকে মাঠ কর্মকর্তারা এমন শঙ্কা করেছেন।
বৈঠকে সব আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাগরিকদের কাছ থেকে আগেরবারের চেয়ে কিছু কম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ নাও হতে পারে।
জানা গেছে, এবারের হালানাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৬ জন ব্যক্তিকে হানাগাদের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এবারও গতবারের মতো তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তারা স্বয়ংক্রিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।
ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়া বা সাড়া কম পাওয়ার কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার সময় অনেকেই নানা প্রয়োজনে অনলাইনে ভোটার হয়েছেন। তাই সাড়া কম মিলছে।
ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সই করা ওই সভার কার্যবিবরণীতেও উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণসহ কার্যক্রমে এনআইডি প্রয়োজন হওয়ায় অনেকেই ইতোমধ্যে ভোটার হয়েছেন। তাই চলমান ভোটার তালিকা হালানাগাদ কার্যক্রমে প্রাক্কলিত ভোটার সংখ্যার চেয়ে কম সংখ্যক নাগরিক ভোটার হতে পারেন।
ইসির এনআইডি শাখার থেকে জানা গেছে, করোনার সময় অন্তত ৪৫ লাখ ভোটার ঘরে বসে নিজের এনআইডি নিজেই অনলাইনে ডাউনলোড করে নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই একদম নতুন ভোটার ছিলেন। এছাড়াও অন্তত ১১ লাখ আবেদন পড়েছিল ভোটার হওয়ার জন্য।
সর্বশেষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালানাগাদ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে সময় ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সে সময় তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ওই বছর হালানাগাদের সময় ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতে ৯৯ লাখ ৬০ হাজারের মতো নাগরিক নিবন্ধন করেছিলেন।
গতবারের সঙ্গে তুলনায় করলে দেখা যায়, প্রায় একই সংখ্যক নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিলেও এবার ২৬ কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এবার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
গত ২০ মে থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।
জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালানাগাদে নিয়োগ করা হচ্ছে ৫৫ হাজার ২শ জন তথ্য সংগ্রহকারী, ১২ হাজার সুপারভাইজার। এক্ষেত্রে দুই হাজার ৫শ জন ভোটারের জন্য ১ জন তথ্য সংগ্রহকারী এবং ১২ হাজার ৫শ ভোটারের বিপরীতে এক জন সুপারভাইজার নিয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া এসব তথ্য সার্ভারে এন্ট্রি করার জন্য ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, পরিবহন, সার্ভার পরিচালনা, নিবন্ধন কেন্দ্র পরিচালনা, আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের তদারকি, সমন্বয়-যোগাযোগ ও জ্বালানীখাত, টেকিনক্যাল সাপোর্ট ইত্যাদি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে ভোটার নিবন্ধন ও বিভিন্ন ভাতা খাতে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ৮১ হাজার ৯শ টাকা। এছাড়া তথ্য সংগ্রহ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া সমন্বয়, যোগাযোগ ও অন্যান্য খাতে ধরা হয়েছে অবশিষ্ট টাকা।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে পাঁচবার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল ও ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি। বর্তমানে ভোট আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষটির তথ্য ভাণ্ডারে মোট ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটারের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। হিজড়া ভোটার আছে ৪৫৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
ইইউডি/এএটি