ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

সুড়ঙ্গ: সমাজ মাসুদদের ভালো হতে দিলো না!

মুহাম্মাদ আলতামিশ নাবিল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
সুড়ঙ্গ: সমাজ মাসুদদের ভালো হতে দিলো না!

২০১৪ সালে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ঘটে এক অভিনব চুরি। সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে প্রায় ২ বছরের পরিশ্রমে দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গ বানিয়ে প্রায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে এক ব্যক্তি।

তবে চুরির মাত্র দুই দিনের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও ঘটনাটি তখনকার মিডিয়ায় বেশ আলোচিত হয়। এমন ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে পরিচালক রায়হান রাফির নতুন চলচ্চিত্র ‘সড়ুঙ্গ’।

কি আছে এই ‘সড়ুঙ্গ’ চলচ্চিত্রে? এককথায় উত্তর দিলে উত্তর হবে দুর্দান্ত প্লট আর ‘আফরান নিশো’। সিনেমার চিত্রনাট্যে যতটা না জোড়, তার থেকেও বেশি জোড় ছোটপর্দা কাঁপানো চলচ্চিত্রে ডেব্যুটেন্ট আফরান নিশোর অভিনয়ে। পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে দর্শক মাসুদ রুপী আফরান নিশোর আনন্দে হাসে, তার কষ্টে বুকচাপা কান্নায় আক্রান্ত হয়। অন্ধ ভালোবাসা, লোভ, কাম, বিশ্বাসঘাতকতা, সমাজের মানুষের অসহযোগিতা, ঘৃণা, প্রতিশোধ ও মৃত্যু দিয়ে শেষ হয় ১৫০ মিনিট দৈর্ঘ্যের জমজমাট চলচ্চিত্রটি। উল্লেখিত প্রতিটি পর্ব মাসুদের জীবনের বহমান। যার দরুণ আর মাসুদের ভালো হওয়া হয়ে ওঠে না।  

রায়হান রাফির একটা ফর্মুলা রয়েছে, নারী চরিত্রকে ভিলেন বানিয়ে তিনি বাজিমাৎ করেছিলেন পরাণ সিনেমায়। এবারও তিনি যেন একই পথে হাটলেন। ময়না চরিত্রে তমা মির্জা তাই দর্শকের একরাশ ঘৃণা নিয়ে সিনেমাটিকে সফল করতে পর্যাপ্ত ভূমিকা রেখেছেন।

মুখ্য চরিত্রগুলোর মধ্যে সিনেমার শেষদিকে এসেও চাটগাঁইয়া পুলিশ অফিসার চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম গোল দিয়ে দিয়েছেন। তার কমিক টাইমিং সিনেমারর বিষাদময়, থমথমে পরিস্থিতিকে করেছে শিথিল। তবে জহির চরিত্রে মোস্তফা মন্ওয়ার এর স্থানে বিবাহিত নারী পটানোর মতো ক্যারিজমাটিক চারিত্রিক বৈশিষ্টসম্পন্ন কাউকে বসালে আরও মানাতো।

সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হয়েছে সিনেটির শুটিং। সিনেমাটির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এর লোকেশন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হয়েছে এর শুটিং যেখানে বছরের অর্ধেক সময় পানি থাকে। তারমধ্যে সেট বানিয়ে ২০০ জনের দল নিয়ে কাজ করার মতো বিশাল চ্যালেঞ্জ উৎড়ে যাওয়ায় পরিচালকসহ পুরো দলকে টুপিখোলা অভিবাদন।

বড়পর্দায় সুনামগঞ্জ এর তাহিরপুর কিংবা চট্টগ্রাম কর্নফুলির ল্যান্ডস্কেপ দেখে ছাতি বড় হয়ে গেছে, এত সুন্দর আমার দেশ! সিনেমার শিল্প নির্দেশনা, সেট বিশেষত ব্যাংক ডাকাতির জন্য খোঁড়া সুড়ঙ্গ, সঙ্গীত (আইটেম সং ব্যতিরেক) ও চিত্রগ্রহণ আলাদা প্রশংসার দাবী রাখে।

বাংলাদেশের সেন্সর ব্যবস্থাপনায় গ্রেডিং এর সুযোগ নেই, তা থাকলে বোধকরি প্যারেন্টাল গাইডেন্স (পিজি) এর আওতায় পড়তো। তবে সিনেমার আগে অনলাইনে প্রকাশিত টিজার কিংবা ফোরটেস্ট-এ অন্তত সে উল্লেখ রাখা যেতো। তাতে সতর্কতা অবলম্বনের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমাটির বিক্রি কমতো না, বড়ং বাড়তো বৈকি! পরকীয়া, যৌন আবেদন, ভায়োলেন্স দৃশ্যে পরিপূর্ণ সুড়ঙ্গ আমার দৃষ্টিতে তাই প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা।

চলচ্চিত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। আর সে দর্পণ-এ পরিচালকের নিজের ভাষ্য প্রকাশকালে এমন এক রক্ষণশীল দেশে বড়পর্দায় যৌনদৃশ্য, পরকীয়া, ব্যাংক লুট, খুন এর মতো নৈতিক স্খলন দেখানো আদতে সেসব বিষয়কে উৎসাহদান করে উস্কে দিচ্ছে কিনা সেসব বিচারের ভার আপাতত দর্শকের কাছেই ছেড়ে দেওয়া হোক।

বিতর্ক সিনেমার প্রচার-প্রসারের জন্য মঙ্গলকর, সেই মঙ্গলের বার্তা নিয়ে আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেড ও চরকির যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র সুড়ঙ্গ বাংলাদেশ মাতিয়ে অচিরেই কলকাতাসহ বাংলা ভাষাভাষী বিশ্বের অনেক স্থানে পা রাখতে যাচ্ছে যা দেশের জন্য গর্বের।

শুধু সুড়ঙ্গ নয়, এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া বাকী চলচ্চিত্রগুলোও এদেশের দর্শক মাতিয়েছে যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। এভাবেই বাংলাদেশী চলচ্চিত্র দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়, সেই শুভকামনায় আজকের মতো বিদায়...।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৩
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।