সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিউজিক প্ল্যাটফর্ম কোক স্টুডিও। এর মাধ্যমে উদীয়মান প্রতিভারা একত্রে কাজ করে ম্যাজিক্যাল সঙ্গীত তৈরি করে নতুন দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পান।
যাত্রা শুরুর পর থেকেই বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতিভাদের একত্রিত করে সৃজনশীল ও নতুন ধারার সঙ্গীত সৃষ্টির মাধ্যমে সঙ্গীত জগতে আলোড়ন তৈরি করে প্ল্যাটফর্মটি। যুগান্তকারী দুটি সিজনে সিএসবি সঙ্গীত জগতে দিয়েছে নতুন প্রাণের ছোঁয়া, অতিক্রম করেছে দেশের সীমানা, প্রশংসা কুড়িয়েছে ভক্ত ও শিল্পী সবার কাছ থেকেই।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গান প্ল্যাটফর্মটিতে পরিবেশিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১০০জন শিল্পী, যার মধ্যে আছেন অনিমেষ রায়, হামিদা বানু, আলেয়া বেগম, মুকুল মজুমদার ঈশানসহ অনেক লুকিয়ে থাকা রত্ন। তাদের কারো কারো ক্যারিয়ারই শুরু হয়েছে এর মাধ্যমে।
দুই সিজনের ২০টির বেশি গান এবং এসব গানের পেছনে কাজ করা শিল্পীরা যথার্থই সকল প্রশংসার যোগ্য। তবে প্ল্যাটফর্মটির নিজের অর্জনও কিন্তু কম নয়। সংখ্যার ভিত্তিতে এই প্ল্যাটফর্মের অর্জন প্রশংসনীয় এবং এটি সঙ্গীত শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।
কোক স্টুডিও বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২৮ লাখের বেশি। এতসব অর্জন হয়েছে চ্যানেলটির যাত্রা শুরুর মাত্র ২০ মাসের মাথায়, যা প্ল্যাটফর্মটির তুমুল জনপ্রিয়তারই প্রমাণ।
এছাড়া, একমাত্র বাংলাদেশি এফএমসিজি ব্র্যান্ড হিসেবে কোক স্টুডিও বাংলা পেয়েছে ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লে বাটন, এটি প্ল্যাটফর্মটির তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবেরই আরও একটি নিদর্শন।
এ থেকে বোঝা যায় যে, প্ল্যাটফর্মটি শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। পৃথিবীর ১৫টির বেশি দেশ থেকে ৩৭০০-এর বেশি স্বতঃস্ফূর্ত রিভিউ ও রিঅ্যাকশন কন্টেন্ট সিএসবি’র বৈশ্বিক জনপ্রিয়তারই প্রমাণ। এভাবে প্ল্যাটফর্মটি আন্তর্জাতিক সঙ্গীতাঙ্গনে একটি দৃঢ় স্থান করে নিয়েছে।
সিএসবি’র গানগুলো সারা পৃথিবীর দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। ইউটিউবে সেরা গানের তালিকায় রয়েছে প্রথম সিজনের ‘ভবের পাগল’, ‘বুলবুলি’ ও ‘নাসেক নাসেক’ এবং দ্বিতীয় সিজনের ‘দেওরা’ ও ‘কথা কইয়ো না’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৮-৩৪ বছর বয়সের মানুষেরা কোক-স্টুডিও বাংলা’র ভক্তদের মধ্যে প্রধান। মোট সাবস্ক্রাইবারদের ৮০ শতাংশের কিছু বেশি বাংলাদেশি। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আছে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। এরপরেই আছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে কোক স্টুডিও বাংলা’র স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তবে কলকাতাতেও এই প্ল্যাটফর্মের ভালো সংখ্যক ভক্ত আছে।
স্পটিফাইয়ের ডেটা দিয়েই সম্ভবত কোক স্টূডিও বাংলা’র বিস্ময়কর সাফল্যের চিত্রটি সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। এখন পর্যন্ত মোট স্ট্রিমিং ডিউরেশন ১ দশমিক ৩৮ কোটি স্ট্রিম, যা ৭ দশমিক ৫ কোটি মিনিটের সমান। এর চেয়েও বেশি চমকপ্রদ হচ্ছে কোক স্টুডিও বাংলা’র গানগুলোর সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের স্পটিফাই অ্যাকাউন্টের বৃদ্ধির চিত্র। স্পটিফাইয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্ল্যাটফর্মটি চালু হওয়ার পর থেকে স্পটিফাইয়ে বাংলা গান শোনার পরিমাণ ৪ গুণ বেড়ে গেছে । স্পটিফাইয়ে সবচেয়ে বেশি স্ট্রিম হওয়া সিএসবি গানগুলো হলো প্রথম সিজনের ‘বুলবুলি’, ‘চিলতে রোদ’ ও ‘ভবের পাগল’ এবং দ্বিতীয় সিজনের ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’ ও ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’।
প্রথম দুই সিজনের প্রতিটি গান প্রকাশ পাওয়ার পর গানগুলো টিকটককে এক প্রকার দখল করে নিয়েছিল। কোক স্টুডিও বাংলা’র গানগুলোর ওপর ভিত্তি করে মোট ১০ লাখের বেশি ইউজার-জেনারেটেড কন্টেন্ট পিস প্রকাশিত হয়েছে, যেসব কন্টেন্টের ভিউ সংখ্যা ৪০ কোটির বেশি। টিকটকে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিংয়ের গানগুলো হলো ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’ ও ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’। ইনস্টাগ্রাম রিলসেও দেখা গেছে সিএসবি’র জাদু, তৈরি হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি ইউজার-জেনারেটেড রিলস। ‘কথা কইয়ো না’ হলো ইনস্টাগ্রাম রিলসে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং গান।
সঙ্গীত ছাড়াও বাংলাদেশের শিল্প ও সৃজনশীল জগতেও প্রভাব রেখেছে কোক স্টুডিও বাংলা। প্ল্যাটফর্মটি যাত্রা শুরু করার পর থেকে, গান ও শিল্পীদের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে হাজারো ভক্ত ও শিল্পীরা তাদের সৃজনশীল চিত্রকর্ম প্রকাশ করেছেন। পেইন্টিং, স্কেচ, ডিজিটাল আর্ট, অ্যানিমেশন, ক্যালিগ্রাফি, এআই-জেনারেটেড ইমেজেস ইত্যাদিসহ হাজারো চিত্রকর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিকমাধ্যম জুড়ে। এই উৎসাহ ও সৃজনশীলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্ল্যাটফর্মটি “কোক স্টুডিও বাংলা বিলবোর্ড ফ্যান আর্ট কনটেস্ট” শুরু করে। ২ মাসেরও কম সময়ে তাদের কাছে ৬০টির বেশি শিল্পকর্ম জমা পড়ে, যার মধ্যে নির্বাচিত কিছু শিল্পকর্ম ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ১১টি বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২৩
এনএটি