বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে শনিবার (০৮ জুন)। সারাদেশের হল মালিকদের নিয়ে এদিন রাজধানীর নয়া পল্টনের একটি হোটেলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভায় সিনেমা হলের সংস্কার ও নতুন হল নির্মাণে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঋণ দেওয়ার কথা হয়েছিল সেটার অগ্রগতি না থাকার অভিযোগ, চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠন হিন্দি সিনেমা চালাতে না দেওয়া, সিনেমা মুক্তি দিতে যে অগ্রিম রেন্টাল ফি দিতে হয় এটার বিরোধিতা করেছেন তারা। এছাড়াও প্রদর্শক সমিতির ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।
এ সময় নানামুখী সংকটের কথা তুলে ধরেন হল মালিকরা। যশোরের মণিহার সিনেমা হলের প্রতিনিধি জিয়াউল হক মিঠু বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের মান অত্যন্ত নিম্নমুখী হওয়ায় সবাই ব্যবসায়ীক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সিনেমা হল খোলা রেখে সবাই লোকসান গুনছেন। এর মধ্যে ভালো সিনেমা গুলো নিতে হলে অতিরিক্ত অগ্রিম রেন্টাল দিয়ে সিনেমা নিতে হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সকলের এক হয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা উচিত। ভারতীয় সিনেমাগুলো আমদানি নিয়েও অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এমন অবস্থা তৈরি করা হলে সিনেমাহল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
গাজীপুর ঝংকার সিনেমা হলের মালিক শরফুদ্দিন এলাহি আসন্ন ঈদের সিনেমার বিষয়ে বলেন, ঈদের সিনেমা নিয়ে আতংকে আছি, রেন্টাল নিয়ে সিনেমা চালানো সম্ভব না। শোনা যাচ্ছে, অনেক টাকা অগ্রিম দিয়ে সিনেমা আনতে হবে। আমাদের পক্ষে ১০-১৫ লাখ টাকা দিয়ে সিনেমা আনা সম্ভব না।
নিউ গুলশান সিনেমা হলের মালিক আমীর হামজা বলেন, চলচ্চিত্রের এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। একটা রাষ্ট্রের খাদ্যের দুর্ভিক্ষ হয় আর আমাদের দেশে সিনেমার দুর্ভিক্ষ চলছে। আপদকালীন সময় চলছে। এই দুর্ভিক্ষে চলচ্চিত্র শেষ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই হল বাঁচাতে হবে। এক বছরের জন্য সরকার যদি ব্যবসা টা ওপেন করে দেয়, কোনো রেস্ট্রিকশন না রাখে, তাহলে আপদকালীন সময় কেটে যাবে।
এ সময় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল বলেন, বাংলাদেশের সিনেমা হল মালিকদের কি কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে, নাকি আমাদের সিনেমাহলগুলো ওপেন থাকবে? আমরা যে কোনো সিনেমা প্রদর্শন করতে পারব সেটা বাংলাদেশের নিয়মনীতি মেনে। একটি সিনেমা আমদানি করা হলে আগের দিন পর্যন্ত সবাই সংশয়ে থাকে সিনেমা চলবে নাকি চলবে না। শুক্রবার সিনেমা মুক্তি পাবে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় জানতে পারি সিনেমা আগামীকাল মুক্তি পাবে। এমন হলে দর্শক জানবে কীভাবে, হল চলবে কীভাবে? এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে। সিনেমা যেটা আসবে এক সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের জানাতে হবে। হিন্দি সিনেমা চালাতে গেলে অনেক বাঁধা পেতে হয়, সরকার আমাদের অনুমতি দিয়েছে, আমরা নিয়ম মেনে সিনেমা চালাব। কারো বাঁধা মানতে যাব না।
তিনি আরও বলেন, এই চলচ্চিত্র শিল্পীকে বাঁচানোর জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। এই শিল্পকে আমরা একটা ছাতার মধ্যে আনার চেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের ভুল-ত্রুটি থাকবে সেগুলো সংশোধন করে এগিয়ে যেতে হবে। আগামী দিনে সবাই একসঙ্গে কাজ করব।
হল মালিকদের এই সভায় প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, অভিনেত্রী অঞ্জনাসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৪
এনএটি