ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আমি চিৎকার করি, ‘তুই কিছু দেখছোস’ বলে হাসছিলেন চিত্রগ্রাহক

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
আমি চিৎকার করি, ‘তুই কিছু দেখছোস’ বলে হাসছিলেন চিত্রগ্রাহক অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। ছবি: ইন্টারনেট থেকে

ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

যে ভিডিওটি অভিনেত্রীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে, যা এক সাংবাদিক অভিনেত্রীর অনুমতি না নিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। এরপর দর্শকমহল থেকে শুরু করে তারকাদের মাঝে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।  

শুটিং সেটে করা একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন ছোট পর্দার অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। ভিডিও পোস্টকারীর ওপর বেশ ক্ষুব্ধও হন অভিনেত্রী। যে বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দর্শকমহল থেকে শুরু করে তারকাদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।  

এমন আবহে শুটিং সেটে ঘটে যাওয়া এক অপ্রীতিকর ঘটনার কথা ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে তুলে ধরেছেন ছোট পর্দার আরেক অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ।  

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে সেই ঘটনার বর্ণনায় এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন এই মডেল-অভিনেত্রী।  

মৌসুমী হামিদের ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- 

“শুটিং-এ একটা ঘটনা শেয়ার করি, প্রায় ৩ বছর আগের কথা পুবাইলে শুটিং করছি। বেশ রাত হয়েছে কিন্তু অনেক কাজ বাকি। সাধারণত আমরা যখন শুটিং করি বিশেষ করে আউটডোর, তখন কাজের চাপ থাকে বেশি এবং শুটিং লোকেশন এবং মেকাপ রুম বা চেঞ্জ রুম বেশ দূরে হয়। বারবার দৌড়াদৌড়ি করে কাপড় পাল্টাতে বেশ কষ্ট হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। রাত ১২টা ৩০ প্রায়। আমি যেখানে শুটিং করছিলাম তার পাশেই একটা মাটির ঘর ছিল। যে ঘরে লাইটের কিছু জিনিস পত্র রাখা ছিল।  

পরিচালক আমাকে খুব করে অনুরোধ করলেন বারবার মেকাপ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে যেই সময় লাগছে সেই সময়টাও নেই , উনি বললেন আমি যদি অনুমতি দেই উনি আমার কাপড়ের ব্যাগটা ওই মাটির ঘরে আনার ব্যবস্থা করবেন ওখানেই চেঞ্জ করতে পারব কিনা। আমি বললাম ঠিক আছে। যদিও সেই ঘরটা মোটেও আরামদায়ক বা সেইফ নয়। তার উপর দেখি ছিটকিনিও নাই দরজায়। আমি বললাম তাহলে কীভাবে হবে?  তখন ক্যামেরায় যিনি ছিলেন উনাকে আমি মামা ডাকতাম উনি বললেন মামু তুমি টেনশন নিও না আমি আছি বাইরে পাহারা দিচ্ছি। আমি ওনার কথা বিশ্বাস করে ঐ মাটির ঘরে ঢুকি। সব জানলা বন্ধ করে দেই এবং দরজা চাপিয়ে দিই। আমি নিজেও শুনতে পাচ্ছিলাম ওনারা বাইরেই আছে কথাবার্তা বলছে। পরিচালক তখন সেটে বা অন্য কোথাও ।  

শাড়িটা পরা শুরু করি নাই তখনও। কী যেন মনে করে শাড়িটার ভাঁজ খুলে আমি পুরো শাড়িটা ওড়নার মত কাঁধের ওপর রেখে দিই এবং ঠিক তখনি লাইটের একটা ছেলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে।  আমি চিৎকার দিয়ে উঠি  ‘এই চেঞ্জ করি ’ খুবি অস্বস্তি কর অবস্থা। ছেলেটা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বের হয়ে গেল। - ‘স্যরি আপু আমি জানতাম না আপনি ছিলেন। ’ তখন প্রচণ্ড রাগ হল মামার উপর। চিৎকার দিলাম একটা, আমি শুধু সহযোগিতা করার জন্য এমন একটা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে রাজি হলাম। কারণ আমাকে কথা দেওয়া হয়েছিল বাইরে একজন দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দেবে। কিন্তু ছেলেটা উঠান পার হয়ে ঘরে ঢুকে গেল কেউ ওরে বলল না যে ঘরে আমি আছি। আমি যখন ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার করছি ইউনিটের উপর দায়িত্বহীনতা নিয়ে তখন সেই মামা (চিত্রগ্রাহক) বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন ‘আরে বাদ দে তো, ও তো ঢুকেই বের হইয়া আসছে এইটুকু সময় আর কি দেখছে। ’ ঐ ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘ঐ তুই কিছু দেখছোস?’ বলে অসভ্যর মত হাসতে লাগলো। ছেলেটা কোনো উত্তর দিল না।  

আমার শরীরের যতখানি অংশ দেখা গেছে সেটা তেমন কোনো বিষয়ই না আমি নাকি ওভার রিয়্যাক্ট করছি। এইকথা শোনার পর আমি বের হয়ে জীবনের সর্বোচ্চ রিঅ্যাক্ট সেদিন করেছি সেটে। আমার কলিগের কাছে আমার ‘সম্ভ্রম’ এতটা তুচ্ছ? পরিবার ছেড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় যাদের সঙ্গে কাজ করি তারা এইভাবে তাদের দায়িত্বহীনতা জাস্টিফাই করবে? 

সেটের বেশিরভাগ মানুষের কাছে মনে হয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরও নির্লজ্জের মত ওনার ওই খ্যাঁক খ্যাঁক হাসায় আমি যে রিঅ্যাকশন দিয়েছি সেটা বেশি বেশি ছিল। সবাই তার অ্যাকশনকেই জাস্টিফাই করে গেল। কিন্তু পরিচালক আমার চিৎকার শুনে সেখানে এসে পুরো ঘটনা শুনে ওই চিত্রগ্রাহকে সেট থেকে বের করে দেন এবং উনি নিজেও ভুল বুঝতে পেরে স্যরি বলেন।  আমি পুরো ঘটনা ওনাকে বলে ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘তোমার পরিবারের কোনো মেয়ে এমন অবস্থায় পড়লে দায়িত্বরত মানুষটা দায়িত্ব পালন না করে উল্টো যদি এমন করে রসায় রসায় হাসত, তারপর প্রচণ্ড অপমানবোধে যদি তোমার নিজের মেয়ে বা বোন বা তোমার বউ যদি রিঅ্যাক্ট করত তুমি কি বলতা তোমার মেয়েকে, মামনি ওভার রিঅ্যাক্ট করতেছো কেন? আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম সেটে ওইদিন ওই চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বহীনতা ও অসভ্যতাকে যারা জাস্টিফাই করছিলেন তাদের উপর।  

এবং আবারো অবাক হয়েছি যারা আয়মান সাদিয়ার ভিডিও দেখে পোস্ট করেছেন ‘ভিডিওতে তো তেমন কিছুই দেখা যায় নাই’ তাদের উপর । যিনি ভিডিওটি পোস্ট করেছেন তার জন্যে আমার কিছুই বলার নাই। উনি ভিডিও ডিলিটও করেছেন। আমি সাধুবাদ জানাই কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এবং মানুষের ট্রলিং। কারণ আমি ওনাকে যতটুকু চিনি উনি একদমই ক্ষতিকারক মানুষ নন।  

বেশ বন্ধু সুলভ হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রচণ্ড পরোপকারী মানুষ। আমি বিশ্বাস করতে চাই না উনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এমন কাজটা করেছেন। লুকিয়ে বা গোপন ক্যামেরায় তো নয়ই। বরং উনি অনুতপ্তই হয়েছেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু যারা বলছেন , ‘এই ভিডিওতে তেমন কিছুই দেখা যায় নাই তাদের জন্য প্রশ্ন আছে, এই তেমন কিছুই না দেখা ভিডিওটির কারণে যে পরিমাণ নোংরা, অসভ্যতা, বুলিং, বডি সেইম, রেইপ থ্রেট মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেটা যদি আপনার পরিবারের কোন মেয়েকে সহ্য করতে হয়, আপনি সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত আছেন তো?”

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯  ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।