ঢাকা: মহান স্বাধীনতা দিবসে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আয়োজনে সেজেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার স্মৃতিবহ জাদুঘরগুলোর আয়োজনে চমক রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বিমান বাহিনী জাদুঘরে এদিন দর্শনার্থীরা বিনা টিকিট প্রবেশ করতে পারছেন। আর স্বাধীনতা জাদুঘর উন্মুক্ত করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসেই।
স্বাধীনতার ৪৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, জাদুঘরসহ বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় করছেন স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন।
এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের লাইন ধরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকের হাতে ও মাথায় বাঁধা লাল-সবুজ পতাকা। কারো গালে পতাকা ও ২৬ মার্চ সম্বলিত আল্পনা আঁকা রয়েছে। রং-তুলি নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রে আসা শিশু-কিশোর ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের হাত ও গালে এসব আল্পনা ও লাল-সবুজ পতাকা এঁকে দিচ্ছেন শিল্পীরা। বিক্রেতারাও বিক্রির উদ্দেশ্যে পতাকা ও ২৬ মার্চের ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এসব বিনোদন কেন্দ্রের সামনে।
তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর রানওয়ের পশ্চিমে আইডিবি ভবনের বিপরীতে বিমান বাহিনী জাদুঘরে স্বাধীনতা দিবসে টিকিট ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দিন ২০ টাকা দিয়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারতেন।
জাদুঘরের প্রবেশদ্বারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. শহীদ বাংলানিউজকে বলেন, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বলাকা, ওয়াটার বিমান, ডাকোটা বিমান, এমআই-৮ এবং এন-৭০ বিমানেও বিনামূল্যে ওঠার সুযোগ রয়েছে।
শিশুদের জন্য এখানে রয়েছে একটি বিশেষায়িত শিশুপার্ক।
জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ দেশের প্রথম পরিবহন বিমান ‘বলাকা’। এতে বিনামূল্যে ওঠার সুযোগ রয়েছে। পুরোনো আদলে ফিরিয়ে এনে এয়ারকন্ডিশনার যুক্ত করা হয়েছে বিমানের ভেতরে। বিমান বাহিনীতে ‘বলাকা’ নামে পরিচিত এই বিমানটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন। ডিভিডি ও ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানো হয় বলাকার মধ্যে।
বর্তমানে জাদুঘরে হেলিকপ্টার, বিমানবাহিনী ব্যবহৃত রাডারসহ রয়েছে ২২টি বিমান।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে বিমান বাহিনীর এ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।
সকাল থেকেই জাদুঘরের সামনে দর্শনার্থীর ভিড় দেখা যায়। বিশেষ এ দিনে অন্তত ৭-১০ হাজার দর্শনার্থীর আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঢাকা চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা শিশুপার্ক এবং শ্যামলী শিশুমেলায়ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, আবার কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীর সঙ্গে এসেছেন এসব বিনোদন কেন্দ্রে।
ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতা দিবসে ছুটির দিনটিতে অন্যান্য দিনের তুলনায় দর্শনার্থী বেশি আসছেন।
সকালে শ্যামলীতে শিশুমেলায় গিয়ে দেখা যায় ছুটির দিনে দর্শনার্থীরা এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিশুমেলা খোলা থাকবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা এবং প্রতিটি রাইডে ৩০ টাকা দিয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে।
অন্যান্য দিনের তুলনায় স্বাধীনতা দিবসে দর্শনার্থী বেশি আসবে বলে জানান শিশুমেলার কর্মচারী শুকুর আলী।
শান্তিনগর থেকে জাতীয় জাদুঘরে স্ত্রী ও ছেলে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে আসা সোলায়মান আহমেদ বলেন, আজ মহান ২৬ মার্চ আমাদের গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এ দিন থেকে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানি শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস পর দেশ শত্রুমুক্ত হয়। দেশ বিজয় লাভ করে। এতে যে সব তাজা প্রাণ ঝরে গেছে অন্ততপক্ষে জাতীয় এসব দিবসে তাদের স্মরণ করা উচিত।
শিশু পার্কে ছেলে ও মেয়ে শিশুকে নিয়ে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। এ দিনে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিষয়গুলো ভালোভাবে জানানো দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫