ঢাকা, শনিবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

বিনোদন

কানের ডায়েরি : এখানে-সেখানে (৪)

বালুর উৎসবে ছড়ানো-ছিটানো তারা!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৫
বালুর উৎসবে ছড়ানো-ছিটানো তারা! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কান (ফ্রান্স) থেকে: লে কান একদিকে। প্যালেস দ্যু ফেস্টিভ্যাল আরেকদিকে।

মাঝখানে মেরিলিন মনরো! সম্মোহন জাগানিয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন হলিউডের এই সুন্দরী। বাসটা ডান দিকে মোড় নেওয়ার আগে তার রূপের ঝলক চোখে পড়বেই। জীবদ্দশায় তিনিও এসেছিলেন কানে। তারই নিদর্শন এই ছবি।


কান শহরে কিছু পথ পরপরই ইতিপূর্বে উৎসবে আসা তারকাদের বড়সড় ছবি ঝোলানো। ক্যাপশনে তাদের নাম আর 'ফেত লা মুর' লেখা। এর অর্থ বালুর উৎসব। দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে এই আয়োজন হয়ে থাকে বলেই এমন নাম উল্লেখ করে দেওয়া। সমুদ্র সৈকতের পাশটাকে বলে রিভিয়েরা। বৃহস্পতিবার উৎসবের নবম দিনেও এখানে সূর্যস্নানে মেতে আছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বালুকাবেলার ওপরে ফুটপাতে স্প্যানিশ গিটার বাজিয়ে 'ডেসপেরাডো' ছবির গান গাইছেন এক ভবঘুরে। তার সাজগোজ ওই ছবির কলাকুশলীদের মতোই। থেমে থেমে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছে সে। তার গানের তালে আরেক বালকের সঙ্গে মেয়েদের অন্তর্বাস পরে নাচছে এক বালক। এই দৃশ্য আশপাশের মানুষের হাসির খোরাক হলো।

রিভিয়েরার শুরুতেই আগোরা নামে একটি তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। সেদিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দর্শকরা। এর কারণও আছে। এখানেই আয়োজকদের আমন্ত্রণে আসা তারকারা খাওয়া-দাওয়া করেন। বিশেষ করে সকাল ও দুপুরে যাদের ছবির প্রদর্শনী, ফটোকল ও সংবাদ সম্মেলন থাকে তারাই এখানে পেটপূজা সেরে নেন। অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া সাংবাদিকরা কাছাকাছি যেতে পারছেন। সামনে কড়া নিরাপত্তা। তাই বেশি ধারেকাছে যাওয়া গেলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে এলেন আনসার্টেন রিগার্ড বিভাগে নির্বাচিত  'আই অ্যাম অ্যা সোলজার' ছবির অভিনেত্রী লুই বুরগয়া। এর পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে এলেন জ্যাক গিলেনহাল। মুহূর্তেই মেয়েদের মধ্যে সোরগোল পড়ে গেলো। 'জ্যাক', 'জ্যাক' বলে যতোটা সম্ভব জোরে ডেকে মার্কিন এই অভিনেতার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো তরুণীরা। একবার হাতও নাড়লেন। তারপর হেঁটে হেঁটে চলে গেলেন শিল্পীদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে। আগেরার সামনে অফিসিয়াল গাড়ি। সবই চকচকে। দেখলেই মনে হবে এই মাত্র কেনা! সেগুলো একে একে প্যালেস দ্যু ফেস্টিভ্যাল ভবন থেকে এসে জড়ো হচ্ছে।

ভবনের সামনে দিয়ে ভ্যানে লালগালিচা মুড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। সামনেই স্থানীয় দুই অভিনেতা সিটকমের শুটিং করছেন। হঠাৎ ফেরারি একটি গাড়ি সাঁই করে চলে গেলো। এই রাস্তাটা গত এক সপ্তাহ বলা চলে অবরুদ্ধই ছিলো উৎসবের কারণে। এখন জনসমাগম কমে গেছে। আয়োজনও প্রায় শেষে পথে। তাই সড়কটিতে ট্রাম চলতে শুরু করেছে। ছাদখোলা পামবাসও দেখা গেলো।

উৎসব কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও টিকেট প্রত্যাশীদের সংখ্যা কিন্তু কমেনি। তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহতই আছে। অনেকের মধ্যে আলাদাভাবে নজর কাড়লো নীল রঙা স্কার্ট পরা এক তরুণী। অনেকক্ষণ ধরে ভবনের সামেনে টিকেটের জন্য অনুরোধের কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক পর্যায়ে সম্ভবত একটু বিরক্ত হয়েই টিকেট পেতে রাস্তার মাঝে পিলারের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে গেলো সে। ছবির প্রতি ফরাসিদের এই প্রেম মনে পড়বে।

হাঁটতে হাঁটতে সড়ক পেরিয়ে রেস্তোরাঁগুলোর দিকে যেতেই চোখে পড়লো কিংবদন্তি গায়ক বব মার্লে ও হলিউড অভিনেতা হিথ লেজারের মতো প্রয়াত তারকাদের পোস্টার বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন এক কৃষ্ণাঙ্গ। অর্থ আয়ের চেয়ে এই তারকাদের ছড়িয়ে দিতে পারার আনন্দই তার মধ্যে বেশি লক্ষণীয়। মরণের পরে এমন স্বীকৃতি তারকারাই তো পান। মনরো, মার্লে, লেজাররা মরেও মরেন না। তারা বেঁচে থাকেন হৃদয়ে। আকাশের তারা যেমন চিরদিন জ্বলজ্বল করে...

(বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে।

ফ্রান্স সময় :২৩৫৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
জেএইচ


** বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।