ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

শুটিং লোকেশন থেকে

এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! রাইসুল ইসলাম আসাদ/ ছবি: সোলায়মান হারুনী মৃদুল

‘পুরো বাসটিকে যদি আমরা একটি দেশ ধরি...’ কথা শেষ করার আগেই চোখ আগ বাড়িয়ে ঘুরে যায় ব্রিজের নিচে। বক্তা-শ্রোতা দু’জনের কাছেই ‘কেন ধরতে হবে দেশ, তাতে ফায়দা কী, বা জরুরী কেন’ সেটার ব্যাখ্যার চেয়ে, হঠাৎই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় জনাবিশেক মানুষের সারি।

ভয়ার্ত প্রত্যেকেই। প্রত্যেকেরই হাত আত্মসমর্পনের ভঙ্গিতে উঁচু। সারি বেঁধে পিছুপিছু দৌড়ানোর মতো করে হাঁটছে প্রত্যেকেই। ওই ‘প্রত্যেকে’র মধ্যে দেখা গেলো এফএস নাঈম, মৌটুসী বিশ্বাস, আইরিন তানি, নাদিয়া নদী- বাকিদেরকে চেনা গেলো না ব্রিজের ওপর থেকে।

পথ সমান্তরাল নয়। উঁচু-নিচু-গর্ত। পাহাড়ি ঢালের মতো। সারির একেবারেই পেছনে রাইসুল ইসলাম আসাদ। হাতে পিস্তল, আর মুখে ‘সবাই চলো’ হুকুম। একদল মানুষকে একাই, এক পিস্তলের ভয় দেখিয়ে, জিম্মি করে আসাদ ফ্রেম আউট হয়ে গেলে আবার মাহমুদ দিদারের মুখে বাসের প্রসঙ্গ জীবিত হয়।

বিআরটিসির লালরঙা বাসটি দাঁড়িয়ে তিনশ’ ফিট রোডে। ঠিকঠাক লোকেশন নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ, গ্রামের নাম পড়শি বলে জানা গেলো। ওখানেই দৃশ্যধারণ হচ্ছে ‘নায়ক’ নাটকের। এতোজনের মাঝে কে নায়ক? ‘তার আগে শুনুন কেন নায়ক?’ মানে গল্পের গভীরে নিয়ে যেতে চান মাহমুদ দিদার। তিনিই ‘নায়ক’-এর নির্মাতা।

তার কথায় সায় দিয়ে গল্পের ভেতর গিয়ে দেখা গেলো বাসটি চলছে হাইওয়ে ধরে। একদল যাত্রী, কাছাকাছি বয়সের। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম বলে ধরে নেয়া যায়। তারা হাসছে, গাইছে, কথা বলছে। তাদের আলোচনার বিষয় কখনও ফেসবুক। কার কতো লাইক কমবেশি। কখনও বিয়ন্সে, এডেলে, একন। স্মার্টফোন আলোচনার বিষয় কখনওবা। এসব নিয়েই হাসাহাসি, তর্ক। অথচ সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারি, সেটা নিয়ে কারও মুখে কোনো কথা নেই।

রাইসুল ইসলাম আসাদও ছিলেন বাসে। শুরু থেকে বেশ চুপচাপ। বাসে উঠেছেন শরীরভর্তি ফুল জড়িয়ে। এতোসব ‘সস্তা’ আলোচনায় বিরক্ত যখন, পিস্তল দেখিয়ে জিম্মি করে বসেন সবাইকে। ‘বুঝলেন তো কে নায়ক? কেন নায়ক- সেটা জানতে চলুন আরেকটু পেছনে যাই’ বাস ঘোরানো হলো মাহমুদ দিদারের কথা মতো। ‘আরেকটু পেছনে’ গল্পের পথ ধরে নয়, তিনশ’ ফিট রাস্তা ধরে। সেখানে একটা মাঠে গ্রাম্য মেলা বসেছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তবু জমেনি অতোটা। বিক্রিবাট্টা খুব একটা নেই স্টলগুলোতে। লোকজনের আনাগোনাও খুব কম।

‘কম হবে না তো কী? লোক তো সব ওইদিকে’- ক্ষুব্ধ এক দোকানদার দেখিয়ে দিলেন মাঠের একেবারে কোণায় লোকের ভিড়। জিম্মি করে ওখানে সবাইকে নিয়ে এসেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন শহীদ মিনারের সামনে। আর বোঝাচ্ছেন- তোমরা এতোগুলো লোক, আমি একা। সবাই ভয় পেলে? কারও সাহস হলো না প্রতিবাদ করার? তোমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেলে? যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, এমন জীবন তো তাদের হওয়ার কথা নয়। তিনি গেয়ে ওঠেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’ তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে, নিচু করে মাথা, গেয়ে ওঠেন সবাই। দেখা গেলো, যারা শুটিং দেখতে ভিড় জমিয়েছে, ঠোঁট মেলাচ্ছে তারাও। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

এনটিভিতে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রচার হবে নাটক ‘নায়ক’।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
কেবিএন/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।