ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

সংগীতজ্ঞ খোন্দকার নূরুল আলম আর নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৬
সংগীতজ্ঞ খোন্দকার নূরুল আলম আর নেই খোন্দকার নূরুল আলম (জন্ম: ১৭ আগস্ট ১৯৩৬, মৃত্যু: ২২ জানুয়ারি ২০১৬)

দেশবরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী খোন্দকার নূরুল আলম আর নেই। শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহ…রাজিউন)।

তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। প্রথিতযশা এই শিল্পীর মৃত্যুতে দেশীয় সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে শোক জানিয়েছেন।

 

পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) অসুস্থবোধ করলে খোন্দকার নূরুল আলমকে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছিলেন পোলিওতেও।

 

পারিবারিক সূত্র আরও জানায়, খোন্দকার নূরুল আলমের দাফন হতে পারে বুদ্ধিজীবী কবরস্থান অথবা বনানী কবরস্থানে।

 

‘শুভদা’ ছবিতে গান তৈরি করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন খোন্দকার নূরুল আলম।  এ ছাড়া এই সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন আরও দু’ তিনবার। ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ (যে আগুনে পুড়ি), ‘এতো সুখ সইবো কেমন করে’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’, ‘এ অাঁধার কখনও যাবে না মুছে’, ‘আমি চাঁদকে বলেছি আজ রাতে’, ‘কাঠ পুড়লে কয়লা হয়’, ‘এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে’ (জলছবি) প্রভৃতি কালজয়ী সুর তৈরি করেছেন খোন্দকার নূরুল আলম।

 

কয়েক বছর ধরে নিভৃতবাস করছিলেনে একুশে পদকে ভূষিত খোন্দকার নূরুল আলম। সচরাচর গণমাধ্যমের খবরে আসতেন না তিনি। ধানমন্ডির ১৫ নম্বরে পৈতৃক বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ছিলো তার নিবাস। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে কিশ্ওয়ার সুলতানার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তান। স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সঙ্গে বাড়িতেই বেশি সময় কাটতো তার।

 

১৯৩৬ সালের ১৭ আগস্ট ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলার ধুবড়ী মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন খোন্দকার নূরুল আলম। বাবা নেসারউদ্দিন খোন্দকার ও মা ফাতেমা খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। মাকে হারান ১৯৪৮ সালে, ১২ বছর বয়সে। একই বছর পুরো পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে চলে আসে।

 

খোন্দকার নূরুল আলম ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে, ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন জগন্নাথ কলেজ থেকে। স্থান পেয়েছিলেন ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটে মেধাতালিকায়। ছেলেবেলায় সাঁওতালি সুর আর বীণের আওয়াজ তাকে নাড়া দিতো ভীষণভাবে। আর ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর সংগীতই হয়ে উঠেছিলো তার ধ্যানজ্ঞান। এরই মধ্যে ১৯৫৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ১৯৫৯ সালে বেতারের সঙ্গে যুক্ত হন খোন্দকার নূরুল আলম। ১৯৬০ সালে তিনি ‘হিজ মাস্টারস ভয়েস’ গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে সুরকার হিসেবে যোগদান করেন। বিটিভির জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

 

‘ইস্ ধরতি পার’-এর মাধ্যমে সংগীত পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যুক্ত হন খোন্দকার নূরুল আলম। ১৯৬৮ সালে ‘অন্তরঙ্গ’ ও ‘যে আগুনে পুড়ি’ বাংলা ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। সে সময় ‘যে আগুনে পুড়ি’র ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

 

এরপর আর থেমে থাকেননি, স্বাধীনতার পর ‘ওরা ১১ জন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন খোন্দকার নূরুল আলম। অসংখ্য কালজয়ী ছবিতে রয়েছে তার সুর করা ও গাওয়া গান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সংগ্রাম’, ‘জলছবি’, ‘দেবদাস’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ প্রভৃতি।

 

চলচ্চিত্র ছাড়াও আধুনিক গান, দেশের গান, বিখ্যাত কিছু কবিতায় সুরারোপ করেছেন খোন্দকার নূরুল আলম। এ ছাড়া জাতীয় ক্রীড়া সংগীত, আনসার-ভিডিপি দলের সংগীত, স্কাউট মার্চ সংগীত, রোটারি ক্লাবের বাংলা ও ইংরেজি গান সুর করেন তিনি। গান লেখা এবং বিভিন্ন সময় গানের স্বরলিপি ও স্টাফ নোটেশন করার কাজও করেছেন।

 

সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন খোন্দকার নূরুল আলম।


বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৬
এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।