ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের এখানে-সেখানে

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের এখানে-সেখানে ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আকাশে সাঁঝের আলো ছড়িয়ে পড়তেই শহরের সংগীতানুরাগী শ্রোতারা সমবেত হতে থাকেন বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে। শাস্ত্রীয় সুরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগের দুই দিনের মতো শনিবারও (২৬ নভেম্বর) পঞ্চম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব উপভোগ করতে সংগীতপ্রেমীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেলো।

আকাশে সাঁঝের আলো ছড়িয়ে পড়তেই শহরের সংগীতানুরাগী শ্রোতারা সমবেত হতে থাকেন বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে। শাস্ত্রীয় সুরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগের দুই দিনের মতো শনিবারও (২৬ নভেম্বর) পঞ্চম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব উপভোগ করতে সংগীতপ্রেমীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেলো।

সংগীতপিপাসু কয়েক হাজার শ্রোতা তিন রাত ধরে মন ভেজাচ্ছেন রাগাশ্রয়ী সুরে। শুদ্ধসংগীত শুনতে আসা এই মানুষগুলোকে শাস্ত্রীয়সংগীতের পন্ডিতরাও রাত জেগে নিয়ে যাচ্ছেন সুরের সাগরে। তাদের পরিবেশনায় মন্ত্রমুগ্ধ সংগীতানুরাগীরা হয়ে আছেন নিশাচর।

পাঁচ বছর ধরে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এই আয়োজন প্রবীণদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ভেতর তৈরি করে দিয়েছে শাস্ত্রীয়সংগীতের কান। ফলে বেড়েছে শুদ্ধসংগীতের মাদকতায় অবগাহন করা শ্রোতাদের মাঝে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি। সংগীতের এই শুদ্ধধারার প্রতি সবার ভালোবাসার সুবাদে এরই মধ্যে উপমহাদেশে র্সবাধিক বড় পরিসরে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’।

এবারও এ আয়োজনকে ঘিরে আর্মি স্টেডিয়ামের এখানে-সেখানে বর্ণাঢ্য সজ্জা। অনলাইনে আগাম নাম নিবন্ধনের মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতারা উৎসবে অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র পেয়েছেন। কে কোন ফটক দিয়ে ঢুকবেন তা ওই পত্রে উল্লেখ থাকায় অসুবিধা হচ্ছে না কারও। কড়া নিরাপত্তা আর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশের পরই চোখে পড়ে খোলা মাঠের মাঝখানে বিশাল আলোকোজ্জ্বল মঞ্চ। এর ওপরেই তিন রাত ধরে চলছে সুরের জলসা। তাল ও লয়ের এই নান্দনিক বৈচিত্রময় মূর্ছনায় অভিভূত সংগীতপ্রেমীরা। শিল্পীদের পরিবেশনা হৃদয় ছুঁয়ে গেলেই শোনা যায় করতালি।

মূলমঞ্চের সামনে অতিথি ও শ্রোতাদের বসার জন্য সারি সারি আসন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতেই ভরে ওঠে সেগুলো। সেদিকে এগোতে থাকলে দেখা যায় গুণী সংগীতগুরুদের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো গ্যালারি। মিডিয়া সেন্টারের ঠিক সামনে একটি মুখ মনকে স্মৃতিকাতর করে তোলে। সেটি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের। তিনি এবার ছবি হয়েই আছেন উৎসবে। এবারের আয়োজন উৎসর্গ করা হয়েছে তার স্মৃতির উদ্দেশেই।

প্রয়াত শিল্পীর ছবি পেরিয়ে হেঁটে সামনে গেলে দেখা যায় সারি সারি স্টল। উৎসবে সংগীত উপভোগের পাশাপাশি শ্রোতাদের জন্য মঞ্চের উল্টোদিকে রয়েছে বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা। এর মধ্যে খাবারের অস্থায়ী দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি। শাস্ত্রীয়সংগীতের পূজারিরা পেটপূজাও করছেন। মঞ্চের দিকে চোখ না থাকলেও স্টেডিয়ামের যেখানেই থাকুন না কেনো, শিল্পীদের পরিবেশনা মিস হয় না ডিজিটাল পর্দার সুবাদে। স্টলগুলোর ঠিক সামনেই আছে ছাউনির নিচে টেবিল-চেয়ারে বসে খাবারের স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা। এখানেও আছে বিশালাকার ডিজিটাল পর্দা।

মূলমঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে স্টেডিয়ামের ঘাস ও গ্যালারিতে বসে থাকা শ্রোতারা পর্দায় শিল্পীদের পরিবেশনা দেখার পাশাপাশি খাওয়া, আড্ডা ও সেলফিতে একাত্ম হচ্ছেন। মাঠের ভেতরেই আছে টাকা তোলার সুবিধাসহ এটিএম বুথ। এসবকে ছাপিয়ে গেছে কাচ দিয়ে ঘিরে সাজিয়ে রাখা শুদ্ধসংগীতের বাদ্যযন্ত্রগুলো।

বীণ বা তুবড়ি, ঢোল, ঢাক, ঢোলক, সারেঙ্গি, এসরাজ, তম্বুরা বা তানপুরা, স্বরমন্ডল, স্বরাজ, সুর সংগ্রহ, রোবানা, চিকারা, তিনতারা, দোতারা, একতারা, শিঙা, মুরজ বা মাদল, শঙ্খ, মৃদঙ্গ, গোপীযন্ত্র, আনন্দলহরি বা খমক বা গুবগুবি, ব্যানা, সারিন্দা, খরতাল, ঝাঁঝ, করতাল, মন্দিরা, কাঁসর বা কাঁসি, মুরলী বাঁশি বা আঁড়বাশি, ফ্লুট, মোহন বাঁশি, সেতার, খঞ্জনী- এসব বাদ্যযন্ত্রের বেশ কয়েকটির নাম হয়তো নতুন প্রজন্মের অনেকে শোনেইনি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা পরিচিত হচ্ছে যন্ত্রগুলোর সঙ্গে। এটাও তো অনেক কিছু!

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।