ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

টিভি শিল্পে মন্দাবস্থা-২

একেই বলে শুভঙ্করের ফাঁকি!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
একেই বলে শুভঙ্করের ফাঁকি!

অনেকদিন ধরে ভারতীয় চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্র। প্রতিবেশী দেশেও আমাদের বিজ্ঞাপন দেখা হচ্ছে ভেবে সাধারণ দর্শকরা খুশি হয়েছেন।

অনেকদিন ধরে ভারতীয় চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্র। প্রতিবেশী দেশেও আমাদের বিজ্ঞাপন দেখা হচ্ছে ভেবে সাধারণ দর্শকরা খুশি হয়েছেন।

কারণ অনেকদিন ধরে একটা অতৃপ্তি আছে যে কলকাতায় কেনো বাংলাদেশি চ্যানেল দেখা যায় না। এর কারণ বাংলাদেশি চ্যানেল কলকাতায় ডাউনলিংক করাতে গেলে শর্তানুযায়ী পাঁচ কোটি টাকা এককালীন ডাউনলিংক ফি এবং প্রতি বছরের জন্য আড়াই কোটি টাকা রিনিউয়াল ফি দিতে হয়। এ বিপুল অংকের শর্তের কারণে বাংলাদেশের কোনো চ্যানেলই কলকাতায় তাদের সম্প্রচার নিতে পারেনি। অথচ বাংলাদেশে মাত্র তিন লাখ টাকা ফি দিয়েই ভারতীয় চ্যানেলগুলো ডাউনলিংক অনুমতি পাচ্ছে।

এই বাস্তবতায় ভারতীয় চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনচিত্র দেখে অনেকে এ-ও ভেবেছেন, এর ফলে এখানকার পণ্যের বাজার বাড়ছে বিভিন্ন দেশে। কিন্তু থমকে যাওয়ার মতো ব্যাপার হলো, এসব বিজ্ঞাপনচিত্র ভারতীয়রা ভারতে বসে দেখছে না! দেখছি শুধু আমরা বাংলাদেশে অবস্থানকারীরাই। কারণ বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিরতি এলে ভিন্ন একটি ফিডে শুধু বাংলাদেশি দর্শকের জন্য বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনগুলো চালানো হয়। একেই বলে শুভঙ্করের ফাঁকি!

একই রকম শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে হিন্দিতে প্রচার হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘আজ রবিবার’। এটিও কিন্তু ভারতে অবস্থানকারী ভারতীয় কিংবা অন্য দেশের দর্শকরা দেখছে না। বিজ্ঞাপনচিত্রের মতো এটাও ভিন্ন একটি ফিডে শুধু বাংলাদেশে অবস্থানরত দর্শকদের দেখানো হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ ছাড়া সিঙ্গাপুর বা এশিয়া প্যাসিফিকের আওতাভুক্ত কয়েকটি দেশের দর্শকদের জন্য এগুলো দেখার সুযোগ আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পে-চ্যানেল সিস্টেমে টাকা খরচ করে তারা এসব চ্যানেল দেখবে কেনো? দেখেও না অবশ্য।

বাংলাদেশে পে-চ্যানেল সিস্টেম পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি বলেই বিজ্ঞাপন নিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি দিতে পারছে একটি চক্র। এমনটাই মনে করেন নির্মাতারা। পে-চ্যানেল সিস্টেম না থাকায় বিজ্ঞাপনই টিভি চ্যানেলগুলোর আয়ের একমাত্র উৎস। কিন্তু তাদের সেই বিজ্ঞাপন কিংবা অর্থও চলে যাচ্ছে ভারতীয় বাজারে। এ কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে টেলিভিশন শিল্প।

আরও কিছু অনিশ্চয়তা ও প্রতিকূলতা এবং বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের টেলিভিশন শিল্প আজ হুমকির মুখে। এ পেশায় সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বার্থসংরক্ষণ এবং দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষার লক্ষে ফেডারেশান অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) আগামী ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিল্পী-কলাকুশলীরা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। অনুমতিবিহীন বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি জানাবেন তারা। পাশাপাশি বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাব করে প্রচার না করার জন্য চ্যানেলগুলো প্রতি আহ্বান জানাবেন তারা।

আশার খবর হলো, বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার হওয়া উদ্বেগজনক মনে করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এটা পুরোপুরি অবৈধ বলে তারা দুটি ডিস্ট্রিবিউটর প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে নোটিশ দিয়েছেন। এ ধরনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপের বাস্তবায়ন হলে সবার আশা, বাংলাদেশের টিভি শিল্প এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গৌরবের সঙ্গে টিকে থাকতে পারবে।

আরও পড়ুন>>>
* টিভি শিল্পের মন্দাবস্থা-১

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।