ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

দর্শকের ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টিকিট-সন্ত্রাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
দর্শকের ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টিকিট-সন্ত্রাস ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি স্মরণকালের সবচে বেশি দর্শক টেনেছে; ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের এক বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র। জীবন-সংসারে ব্যস্ত মানুষ একটু অবসর পেলেই এক সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে দল বেঁধে যেতেন সিনেমা হলে। কিন্তু গত এক দশকে সিনেমার সুদিন ফুরিয়েছে। সিনেমা আর মধ্যবিত্তের পারিবারিক বিনোদন নেই। অশ্লীলতাসহ নানা নেতিবাচক কারণে ঘোর সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র।

ঢালিউডের মানহীন সিনেমা, দেশের হলগুলোর অনুন্নত পরিবেশ, অশ্লীলতা ও বিদেশি সিনেমার কাছে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা ---এসব নানা কারণে আমাদের দেশের দর্শকরা এখন সিনেমাহল-বিমুখ। ।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসে হতাশার চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সিনেমার। আবারও হলমুখি হচ্ছেন দর্শক। গত কয়েক বছরে ‘টেলিভিশন’, ‘আয়নাবাজি’, ‘শিকারি’, ‘রক্ত’, ‘বসগিরি’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’, ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’, ‘জালালের গল্প’, ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘বাদশা’র মতো নিটোল ব্যবসা সফল সিনেমা তৈরি হয়েছে ঢালউডে।

তবে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমাটি বাংলা সিনেমার সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন পর ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেপ্রেমী দর্শকদের হলমুখি করতে পেরেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকাশ্যে চলছে টিকেট কালোবাজারি; বৃত্ত-চিহ্নিত ব্যক্তি এদেরই একজন; ছবি: বাংলানিউজ তবে নতুন করে দর্শকদের এই হলমুখি হওয়াকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে টিকিট কালোবাজারিতে মেতেছে টিকিট-সন্ত্রাসী নামের দুর্বৃত্তরা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকার সনি, বলাকা সহ কয়েকটি সিনেমা হলে কর্তৃপক্ষের সামনেই টিকেট কালোবাজারি চলছে।

মিরপুর ১নং এলাকার বাসিন্দা লিখন বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সনি সিনেমা হলে বিকেল ৬টার শো’র টিকিট কিনতে ৪টায় কাউন্টারে যাই। কাউন্টার থেকে সাড়ে ৫টায় আসতে বলা হয়। কিন্তু ৫টায় গিয়ে দেখি কাউন্টার বন্ধ।

লিখন বলেন, কিন্তু ৫টার সময়ই গেটে দেখি ৫৫ টাকার টিকিট ১৫০ টাকা এবং ১০০ টাকার টিকিট ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর তা বিক্রি করা হচ্ছে গার্ডদের সামনেই।

লিখনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল হলের সামনে গিয়েই। সেখানে একজন চিৎকার করে ১৫০ ও ২০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করছেন। খোঁজ নিতে কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় কাউন্টার বন্ধ।

টিকিট চেকারের কাছে প্রকাশ্যে টিকেট কালোবাজারির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,দেখেন আমরা কর্মচারী। আমরা কিছু জানি না। অন্য হলের চেকাররা টিকিট বিক্রি করে। কিন্তু আমরা কিছু পাই না। আপনি সামাদ সাহেবের সাথে কথা বলেন। উনি হলের ম্যানেজার।

পরে সামাদ সাহেবের খোঁজ জানতে চাইলে ব্ল্যাকে টিকিট-বিক্রেতা বলেন,সামাদ সাহেব আজ ছুটিতে আছে। টিকিট কয়টা লাগবে আমাকে বলেন। আমি আজকে দায়িত্বে আছি।

এসময় তার নাম জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘আমার নাম রতন। টিকিট লাগলে নেন, না লাগলে চলে যান।

বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে আসা সেলিম নামের আরেক দর্শক বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি করা হয়নি। শুরু থেকেই বাইরেই বেশি দামে সব টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণেই আমাদের দেশে সিনেমা পাইরেসি হয়। হল কর্তৃপক্ষ যখন দর্শকদের সাথে চিট (প্রতারণা) করে, তখন দর্শকও চিট করেন।

টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি স্বীকার করে বলাকা সিনেমা হলের বুকিং এজেন্ট আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, বছরে এমন সিনেমা হয়তো একটা আসে। সারাবছর হল দর্শকশূন্য থাকে। এজন্য সবাই একটু টাকা কামাইতে চায়। তবে এর সাথে হলের কেউ জড়িত নয়।

কোলোবাজারি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আহমেদুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, শুধু টিকিট কালোবাজারি নয়, আমাদের সিনেমা জগৎটাই একটা সিন্ডিকেটের মধ্যে আটকে গেছে। যে সময়ে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তি পেয়ে সব সিনেমা হলে চলছে, একই সময়ে অনিমেষ আইচের অন্য একটা সিনেমা মুক্তি পেলেও কোনো হলে সেটা দেখানো হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমি নিজেও বলাকা সিনেমা হলে গিয়ে অনেক সময় টিকিট পাইনি। তখন অন্য কারোর মাধ্যমে বাধ্য হয়ে কালোবাজারিদের থেকে টিকিট নিতে হয়েছে। এসকল সমস্যা সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়:১৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
এসআইজে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।