ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

আত্মার শান্তি খুঁজতেন বারী সিদ্দিকী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
আত্মার শান্তি খুঁজতেন বারী সিদ্দিকী

নেত্রকোনা: মৃত্যু নশ্বর দেহটাকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কিন্তু শিল্পীর প্রতি যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা তা কোনোদিন শেষ হবার নয়। বারী সিদ্দিকী ছিলেন, থাকবেন অনন্তকাল সবার হৃদয়ে।

যে শিল্পী তার কণ্ঠে ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজ, আমার মন্দ স্বভাব, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, শুয়া চান পাখি’ এ ধরনের মর্মস্পর্শী গান শ্রোতা ভক্তদের উপহার দিয়েছেন, আর যাই হোক তাকে একজীবনে ভোলা যাবে না।

বারী সিদ্দিকী বড় ভাইদের কাছে শুনে শিশুকালেই হাতে বাঁশি তুলে নিয়েছিলেন।

মায়ের নির্দেশ আর অনুপ্রেরণায় দেশ বিদেশ ঘুরে পদ্ধতিগতভাবে চর্চা করে বংশীবাদক হন।

বাঁশি বাজানো সম্পর্কে বারী সিদ্দিকী বলতেন, ফুঁ দিলেই বাঁশি বাজে না। বাঁশি বাজে নিঃশ্বাসে, আত্মার সম্পর্কে। বাঁশি বাজানোর জন্য বছরের পর বছর সাধনা করতে হয়।

তিনি নিজে প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা করে বাঁশি বাজানো প্র্যাকটিস করেছেন টানা ১২ বছর। এছাড়াও বাঁশি বাজানো শিখতে ওস্তাদ আমিনুরের বাসায় সাত বছর থেকেছেন তিনি।

নব্বই দশকের আগে অর্থাৎ জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগে বারী সিদ্দিকী একসময় ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে নানারকম ফেস্টিভ্যালে ক্লাসিক্যাল গানের মিউজিকে বাঁশি বাজাতেন।

গান সম্পর্কে শিল্পী বলতেন, তিন/চার বছর বয়সে মায়ের মুখে গাইতে শুনেছেন-
‘শাশুড়ি রে কইয়ো গিয়া, আজি রান্না রান্দি থুই, আমি রইলাম যমুনায় জলে আয় রে সজনী, চল সখি গিয়া ভরি কলি...’
পরে মায়ের গলায় গাওয়া এ গানটি অজান্তে গেঁথে গিয়েছিল সেদিনের শিশু বারী সিদ্দিকীর মনে। ব্যাস, বাঁশির পাশাপাশি গানেও মজে যান বারী।

কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় কয়েকটি গান গেয়ে বারী সিদ্দিকী হয়ে ওঠেন দেশবরেণ্য জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী।

এদিকে মৃত্যুর ঠিক আগে টিভি প্রোগ্রামেও নিজেদের আঞ্চলিক ‘ধামাইল’ গান সম্পর্কে বারী সিদ্দিকী সবাইকে ধারণা দিতেন। আর বলতেন ‘ ধামাইল কি তা জেনে রাখেন। আমি মরে গেলে এগুলো আর পাবেন না’।

ধামাইল গান সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কয়েক বাড়ির সব বয়সী নারীরা একত্রিত হয়ে যে গান গায় সেই গানকেই ধামাইল বলা হয়।

ধামাইল গানের ধরন বা উদাহরণ টানতে গিয়ে বারী সিদ্দিকী গেয়েছেন ‘শাড়ি থুইয়া কলসি লইয়া নামল জলের ঘাটে ও আমরা গিয়াছিলাম জলে/ নীলুয়া বাতাসে শাড়ি বাতাসে উড়ায়/কদম ডালে থাইক্কা ভাইগনা বাঁশিটি বাজায় লো, সই আমরা গিয়াছিলাম জলে’।

তবে গান কিংবা বাঁশি এসবের কোনোটা পৃথিবীর স্বার্থান্বেষী কিছু পাওয়ার আশায় করতেন না বলে বারী সিদ্দিকী’র দাবি ছিল। সবাইকে উদ্দেশ্য করে শিল্পী বলেছিলেন, ‘গান বলেন আর বাঁশির কথাই বলেন, সবকিছুতে আমি আত্মার শান্তি খুঁজেছি। যা করেছি সব আত্মার শান্তির জন্য। ’

তবে এরপরও সবকিছুর পাশাপাশি জীবদ্দশায় শিল্পী শ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছেন তা নিয়ে তিনি বেশ সন্তুষ্ট ও সুখী ছিলেন।
শিল্পী শ্রোতা ভক্তরা বলেন, বারী সিদ্দিকী ছিলেন, থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।