ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

শীতে কাঁপছি দেখে রোজী তার গায়ের শাল আমার গায়ে দেয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৮
শীতে কাঁপছি দেখে রোজী তার গায়ের শাল আমার গায়ে দেয় এক ফ্রেমে রোজী ও মালেক আফসারী

‘আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো পাঁচ বছরের। এই সময়টায় আমি তাকে না হলেও পাঁচ হাজার বার বিয়ের কথা বলেছি। কিন্তু সে কিছুতেই রাজি ছিলো না। অথচ হুট করেই সে একদিন আমাকে বিয়ে করে ফেললো। এমন আচমকা ব্যাপারটা হয়েছে যে, বিয়ের এক ঘণ্টা আগেও জানতাম না রোজীকে বিয়ে করছি।’

প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজী আফসারীর সঙ্গে প্রণয়-পরিণয়ের এমন মধুর স্মৃতিচারণ করছিলেন প্রখ্যাত নির্মাতা মালেক আফসারী। কিডনি রোগে ভুগে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ অজস্র ভক্তকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন রোজী।

তার প্রয়াণের ১১তম বার্ষিকীতে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছিলেন আফসারী।

রোজীর চেয়ে আফসারী প্রায় ২০ বছরের ছোট ছিলেন। প্রেম থেকে বিয়ে, তাদের ২৭ বছরের সম্পর্কে কখনও তিল পরিমাণ ফাটল ধরতে পারেনি কেউ। ‘জীবন থেকে নেয়া’ খ্যাত অভিনেত্রী রোজীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়ও তার পাশে ছিলেন আফসারী।

আলাপে বিয়ের স্মৃতিটা হৃদয়পটে ভেসে ওঠে আফসারীর, “দিনটি ছিলো ১৯৮৫ সালের ১৮ জুন। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালে রোজী কল দেয় আমাকে। কল রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার সাদা পাঞ্জাবি আছে?’ ‘আছে। কিন্তু কেন?’ ‘দ্রুত মগবাজার এসে আমাকে কল দাও। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি’। ”

আফসারী তাকে ডাকার কারণ বারবার জিজ্ঞেস করার পরও রোজী কিছু বলেননি। তখন মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়নি। তাই শহরের বিভিন্ন স্থানে রাখা টেলিফোন বুথ থেকে ‘পয়সা’ ব্যবহার করে রোজীর বাসার ল্যান্ডফোনে কল দিতেন আফসারী। রোজীর ডাকে মহাখালীর বাসা থেকে দ্রুত মগবাজার পৌঁছান তিনি। সেখানে একটি হাসপাতালের টেলিফোন বুথে রোজীকে কল দেন আফসারী।  

তার ভাষ্যে, “তখন সে আমাকে বললো, ‘মগবাজার কাজী অফিসে চলে আসো’। ঠিক তখনই আমি বুঝতে পারি আমাদের আজ বিয়ে। অথচ এক ঘণ্টা আগেও জানতাম না রোজীকে বিয়ে করছি। ” 

রোজী ও আফসারীর সম্পর্কের শুরু ১৯৮০ সালে ‘বিনি সুতার মালা’ ছবির সেটে। ঢাকার পাশে দোহারের কলাকোপায় ছবিটির দ্বিতীয় লটের শ্যুটিং চলছিলো। এই ছবির নায়িকা ছিলেন রোজী। আর সহকারী পরিচালক ছিলেন মালেক আফসারী।  

হৃদয়গ্রাহী সেই বিকেলটির দৃশ্য আজও আফসারীর স্মৃতিপটে ভাসে, ‘শ্যুটিং শেষ করে একা একা রোজী পুকুর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখছিল। আমি অনুমতি নিয়ে তার পাশে বসি। তখন প্রচণ্ড শীত ছিলো, আমি কাঁপছিলাম। সেটি দেখে রোজী তার গায়ের শাল খুলে আমাকে পরিয়ে দিলো। তখন আমার প্রতি তার অন্যরকম একটি টান অনুভব করলাম। কথা বলতে বলতে দু’জন দু’জনের মনের খুব কাছে চলে গেলাম। ’ 

‘এরপর আমাদের সম্পর্কের সীমা বাড়তে থাকে। নিয়মিত কথা বলা, দেখা করা চলতে থাকে। এভাবে চলে যায় ৫ বছর। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিলো এতো দীর্ঘ সময়েও কেউ কাউকে কখনো একবারে জন্যও ‘তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটা বলিনি’।

১৯৬২ সালে আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘জোয়ার এলো’ ছবি দিয়ে রুপালি পর্দায় নাম লেখানো রোজী প্রায় সাড়ে তিনশ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে, ‘ওরা ১১ জন’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘প্রতিকার’। আর তার প্রথম পরিচালিত ছবি ছিলো ‘আশা নিরাশা’।

১৯৪৬ সালের ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায় রোজীর জন্ম। তার প্রথম স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক এম. আব্দুস সামাদ। ওই সংসারে রোজীর এক কন্যা সন্তান, নাম কবিতা। আর আফসারীর সংসারে আসে এক পুত্র সন্তান, নাম জুবায়ের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৮
জেআইএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।