ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

বাবা, আমি আর লিখতে পারছি না

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
বাবা, আমি আর লিখতে পারছি না বাবা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে সোহেল আরমান

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন। বর্তমানে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেসরকারি ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এই কিংবদন্তি নির্মাতা।

বাবার অসুস্থতার কারণে ভেঙে পড়েছেন তার ছোট ছেলে নির্মাতা ও অভিনেতা সোহেল আরমান। শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

সোহেল লেখেন, ‘যে মানুষটি এ দেশের গণমানুষের কথা বলতেন। অবক্ষয়ের কথা বলতেন। বিশেষ করে যারা নিপীড়িত, অনাহারী ও অবহেলিত তাদের কথা বলতেন। যে মানুষটি শ্রেণী সংগ্রামের কথা বলতেন। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের হয়ে প্রতিবাদ করতেন যখন তারা শোষিত হতেন। যে মানুষটির কলম এ বাংলার সাহিত্যকে গর্বিত করে। যে মানুষটির লেখা গান কোটি কোটি মানুষের ঘরে। এখনো কোনো যুবক গেয়ে ওঠে জন্ম থেকে জ্বলছি মা গো...। ’

‘যে মানুষটির চলচ্চিত্র বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে, একটি আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্র হয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে নিয়ে আসেন। যে মানুষটিকে নিয়ে বলে শেষ করা যায় না। এ যেন অফুরন্ত ট্রেন লাইনে, এক গোলাপীকে নিয়ে উঠে গেছেন তিনি। ’

সোহেল আরও লেখেন, ‘বাবা...আমি আর লিখতে পারছি না। তোমার এত এত সৃষ্টি এ যেন এক বিশ্ববিদ্যালয়। আজ সেই মানুষটি মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহে বাধাজনিত কারণে ৬দিন ধরে হাসপাতালের আইসিইউ’তে লাইফ সাপোর্টে জীবন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহতালা যেন তাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। ’

বাবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে সোহেল লেখেন, ‘ফিরে এসো বাবা...। ’

গত ১৮ নভেম্বর সকালে ব্রেন স্ট্রোক করার পর আমজাদ হোসেনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য খুব শিগগিরই ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’খ্যাত এই নির্মাতাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে নেওয়া হতে পারে।

আমজাদ হোসেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে বাংলানিউজকে সোহেল আরমান বলেন, বাবার অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত। চিকিৎসার জন্য বাবাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে থাকার কারণে এখনই তাকে নেওয়া যাচ্ছে না। দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চাইছি।

৭৬ বছর বয়সী আমজাদ হোসেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গল্পকার, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি ‘ভাত দে’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’র মতো কালজয়ী অনেক সিনেমা নির্মাণ করেছেন।

‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।