ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

‘মেকআপ’ নিষিদ্ধ করা হয়নি!

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
‘মেকআপ’ নিষিদ্ধ করা হয়নি! ‘মেকআপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান ও নিপা আহমেদ

সেন্সর বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম খসরু দাবি করেছেন, তারিক আনাম খান, রোশান ও নিপা আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘মেকআপ’ নাকি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নিষিদ্ধের খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন।

 

চলচ্চিত্র অঙ্গনের গল্প নিয়ে নির্মাতা অনন্য মামুন নির্মাণ করেছেন ‘মেকআপ’। বেশ কিছুদিন আগে সেন্সরে জমা পড়েছিল সিনেমাটি। চলচ্চিত্রের মানুষকে বাজেভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগে ‘মেকআপ’ ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান সেন্সর বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রের মানুষ মানেই খারাপ এটা ভাবা অন্যায়। আমরা চাই না সারা দেশের মানুষ ছবিটি দেখে ভুল কোনো ধারণা তৈরি করুক। তাই ছবিটি ব্যান করা হয়েছে। ’ 

তবে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘নিষিদ্ধ করা হয়নি, ছবিটির কিছু বিষয় শুধু অবজার্ভেশন হয়েছে। '

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরেও খসরু বলেন, ‘ছবিটি আসলে সাধারণ দর্শকদের জন্য মুক্তি দেওয়ার মতো নয়। বাজেভাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই ছবি বানানো হয়েছে। ’ 

তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সেন্সর বোর্ডের নেই। যদি নিষিদ্ধ করতে হয় তাহলে নতুন করে আইন তৈরি করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। সেন্সর বোর্ডের কাজ সার্টিফাই ও আনসার্টিফাই করা।  

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক জসিম আহমেদ বলছেন, 'চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন সেন্সরবোর্ডকে কোনো চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেয়নি। তাদের ক্ষমতা সার্টিফিকেট দেওয়া অথবা আনসার্টিফায়েড করা পর্যন্ত। সেন্সর বোর্ড আনসার্টিফায়েড করলে প্রযোজক আপিল করতে পারেন, তাতেও সার্টিফিকেট না পাওয়া গেলে আদালত আছে। সরকার কোনো চলচ্চিত্রকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের আগে কি নিষিদ্ধ বলা যায়? আইনজ্ঞরা কী বলেন?'

চলচ্চিত্র সেন্সর আইন (১৯৬৩) ঘেঁটে দেখা গেছে, 'চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন, ১৯৬৩'-এর কোথাও 'নিষিদ্ধ' বা 'ব্যান' শব্দটি নেই। সেন্সর বোর্ডের আইন অনুযায়ী একটি চলচ্চিত্রকে প্রদর্শন উপযুক্ত ও প্রদর্শন অনুপযুক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়, এ ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট দেওয়া বা না দেওয়ার প্রসঙ্গ আসে।  

আইনের বিষয়টি আরো পরিষ্কার হলো  চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের কথায়। তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত ‘মেকআপ’ চলচ্চিত্রের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমাদের কিছু অবজার্ভেশন রয়েছে ছবিটি সম্পর্কে। আমরা মোটেও নিষিদ্ধ করিনি। আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হলে প্রদর্শন উপযোগী বা অনুপযোগী হিসেবে জানিয়ে দেওয়া। এরপর আপিল করার সুযোগ রয়েছে। আপিল বোর্ড যদি বলে প্রদর্শন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সিনেমাটি ছাড়পত্র পাবে।  

আগেও সিনেমা নিষিদ্ধ হয়েছে জানিয়ে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, 'যদি ধাপে ধাপে ছবিটি মুক্তির একেবারে অনুপযোগী হয়, আপিল বিভাগেও সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। সে ক্ষেত্রে ওই ছবি আর মুক্তি পায় না। এর আগেও এমন হয়েছে। সেই অর্থে হয়তো নিষিদ্ধ বলা হয়। তবে 'মেকআপ' ছবিটির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কিছু পয়েন্ট নোট করা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অবশ্যই আমরা নির্মাতাকে জানিয়ে দেব।

কী আছে এই মেকআপ সিনেমায়?

মেকআপ ছবিটি নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে নিষিদ্ধ প্রসঙ্গ চলে আসার পর। স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল তৈরি হয়ে যায়- কী রয়েছে এই সিনেমায়, কী দেখানো হবে? এখন পর্যন্ত জানা গেছে, শোবিজ জগতের বেশ কিছু লুকোছাপা গল্প এই ছবির মুখ্য কাহিনি। সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বে মি টু হ্যাশট্যাগ ও কাস্টিং কাউচ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তবে এ দেশের প্রেক্ষাপটে সেসব হালে পানি পায়নি। বিষয়টি থিতিয়েই গিয়েছিল, কিন্তু মেকআপ মৃত বিষয়টিকে জীবিত করে তুলেছে। কাস্টিং কাউচ বিষয়টি মেকআপ চলচ্চিত্রের একটি বিতর্কিত বিষয়।  

এখানে বলা হয়েছে, 'নায়িকা হতে হলে শুতে হবে। ' এই সংলাপের তীব্রভাবে বিরোধিতা করা হয়েছে। সব নায়িকাই কি নায়িকা হতে গিয়ে শয্যাসঙ্গী হয়? এমন প্রশ্ন সামনে চলে আসে।  

অনন্য মামুন তার এই ছবি সম্পর্কে বলেন, 'আমি আসলে বুঝতেছি কী হয়েছে। আমার কাছে কোনো লিখিত চিঠি আসেনি। আমি শুনেছি কিছু কিছু দৃশ্যে আপত্তি রয়েছে। যদি আপত্তি থাকে, তাহলে সেটাকে সংশোধন করতে হবে। তবে ছবিটি মুক্তি পাবে। আমি বুঝতে পারছি, মৌলিক গল্পের ছবি বানালেই সমস্যা। লুতুপুতু প্রেমের গল্প বানালে সমস্যা হবে না নিশ্চয়ই। '

ছবির গল্প ও আপত্তিকর বিষয়গুলো নিয়ে সেন্সর বোর্ডের সদস্য অরুণা বিশ্বাস বলেন, কিছু ব্যাপার আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। সামাজিক কারণে কোনো কোনো ব্যাপার অন্তরালে থাকে। কিছু নোংরা বিষয় এই সিনেমায় নিয়ে আসা হয়েছে, যা কোনোভাবেই প্রগতিশীলতার চিত্র প্রকাশ করে না। আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসের মুখে, এখন ভালো কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করা দরকার। বেডরুম হলেও কথা ছিল, ওয়াশরুমের ভেতরের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব নিশ্চয়ই ভালো কোনো উদ্দেশ্যে বানানো নয়। আমরা এমন ছবি মুক্তি দেওয়ার পক্ষে নই। আমাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে, আমরা মতামত দিয়েছি। বাকিটা সিদ্ধান্ত হলে জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।