ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

লতার শেষকৃত্যে শাহরুখের ফুঁ, বিতর্কের শুরু যেভাবে

নাজমুস সাকিব রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
লতার শেষকৃত্যে শাহরুখের ফুঁ, বিতর্কের শুরু যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দৃশ্য নিয়ে বির্তক দেখা দেয়।

২০২১ সালের ২ অক্টোবর মাদককাণ্ডে ছেলে আরিয়ানের নাম আসার পর থেকেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন বলিউড স্টার শাহরুখ খান। স্থগিত রেখেছিলেন সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ‘পাঠান’ সিনেমার শুটিং।

বিরত ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।  প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইনস্টাগ্রামে দেখা মেলে শাহরুখের। শুরু হয় সিনেমার শুটিং। দেখা মেলে বিজ্ঞাপনেও। তবে এবার আরিয়ান নয়—বিতর্কে নাম জড়িয়েছে স্বয়ং শাহরুখের।

রোববার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ৮টার দিকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভারতের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। এদিন সন্ধ্যায় শেষকৃত্যের জন্য লতার মরদেহ তার বাড়ি প্রভুকুঞ্জ থেকে মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে নেওয়া হয়। প্রচুর ভক্ত সে সময় তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সেখানে ছিলেন বিশিষ্টজনেরাও।

লতার শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানাতে যান শাহরুখ ও তার ম্যানেজার পূজা দাদলানি। একটি অস্থায়ী বেদিতে ওঠে কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পীকে শেষ দেখা দেখছিলেন তারা। এ সময় ফুল দেওয়ার পর শাহরুখ দুই হাত তুলে দোয়া পড়া শুরু করেন। একটু পর দোয়া শেষ করে শাহরুখ মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে বাতাসে ফুঁ দেন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অনেকে অভিযোগ করেন বলিউড স্টার লতার মরদেহে থুতু দিয়েছেন। তবে এই বিতর্কে বরাবরের মতোই অনেককে পাশে পেয়েছেন শাহরুখ।  তারা বলছেন, থুতু নয়—শাহরুখ আসলে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়েছিলেন। ইসলাম ধর্মে ফুঁ দেওয়ার বিষয়টি প্রচলিত।

এনডিটিভিসহ বেশ কিছু স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফুঁ দেওয়ার ওই দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক শুরু করেন হরিয়ানা রাজ্যের বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অরুণ যাদব। তিনি ফুঁ দেওয়ার ভিডিও টুইট করে প্রশ্ন তোলেন—শাহরুখ কি লতার মরদেহে থুতু ছিটালেন?

অবশ্য বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অরুণ যাদব প্রথম এই বিতর্ক শুরু করেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে বিজেপি নেতার এই টুইট অনেকে শেয়ার করেছেন। এর মধ্যে ছিলেন বিজেপির উত্তর প্রদেশ রাজ্যের একজন মুখপাত্র প্রশান্ত উমরাও। তিনি একই ছবি এবং ফুটেজ টুইট করে অভিযোগ করেন—লতার মরদেহে থুতু মারছেন শাহরুখ। তবে বিজেপি নেতাদের তোলা এই বিতর্ক ও অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছেন অনেকেই।

চলচ্চিত্র প্রযোজক অশোক পণ্ডিত বলেছেন, যেসব লোক শাহরুখের বিরুদ্ধে লতাজির মরদেহে থুতু দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন, তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। এ ধরনের জঘন্য সাম্প্রদায়িতার কোনো স্থান ভারতে নেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিল্পপতি জাফর সারেশওয়ালাও শাহরুখের পক্ষ নিয়ে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, যে দৃশ্য ভারতের ঐক্য তৈরিতে সাহায্য করতে পারে তাকে কিছু গোঁড়া ধর্মান্ধ সহ্য করতে পারছে না। লতা মঙ্গেশকার এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি মৃত্যুর পরও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করছেন। আর শাহরুখ খান এমন একজন মানুষ যিনি ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন।

এ বিতর্ক নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন মুসলিম ধর্মীয় নেতা শামসুদ্দিন তামবোলি। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্মে ফুঁ দেওয়া একটি প্রচলিত বিষয়। শাহরুখ তার ধর্মমতে প্রার্থনা করেছেন। মানুষ আল্লাহর কাছে দোয়া করে মৃত ব্যক্তি যেন জান্নাতে যায় এবং পরকালে যেন শান্তি পান। শাহরুখ সেই দোয়াই করেছেন। ফুঁ দিয়ে তার মনের ইচ্ছে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এটি ধর্মের প্রচলিত বিধান।

শামসুদ্দিন তামবোলি আরো বলেন, অনেক কট্টরপন্থীর মতে একজন অমুসলিমের জন্য এমনভাবে দোয়া করা উচিত নয়। তবে উদারপন্থী মুসলমানরা তা মানেন না। শাহরুখ যা করেছেন তা মানবিক আচরণ। এর উল্টো মানে বের করা অন্যায়। তিনি থুতু দিয়েছেন—এ কথা তুলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্নাম ছড়ানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানোর নজির অতীতে আরও ঘটেছে। বিষয়টি উল্লেখ করে অল্ট নিউজ নামে যে মিডিয়া সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবরের সত্যতা যাচাই করে তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবাইর জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চে মানুষের ওপর থুতু দেওয়ার জন্য তাবলীগ জামাতকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

এদিকে এ ঘটনায় শাহরুখের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী-রাজনীতিক ঊর্মিলা মাতোন্ডকর। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের এত অবক্ষয় হয়েছে যে আজকাল প্রার্থনাকেও আমরা থুতু বলে ভুল করছি। আর এই অভিযোগ যাকে নিয়ে উঠছে, সেই মানুষটা এতগুলো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাজনীতি এত নিচে নেমেছে দেখে দুঃখ হয়।

এর আগে ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর নিজের ৫০তম জন্মদিনে অসহিষ্ণুতা বিতর্কে জড়ান শাহরুখ। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ভারতে চরম অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশটি ক’দিনের মধ্যে অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে।

এরপর তাকে দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে পাকিস্তানি জঙ্গির সঙ্গে তুলনা করেন কট্টরবাদী হিন্দু নেতারা। বিভিন্নভাবে বিজেপি নেতাদের রোষের শিকার হন শাহরুখ। তার মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা বিভিন্ন রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি ছেলে আরিয়ান মাদককাণ্ডে জড়ানোর বিষয়টিতেও বিজেপির ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ করেন অনেকে।

লেখক: নিউজরুম এডিটর, বাংলানিউজ

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।