ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সৌন্দর্যে সবার থেকে আলাদা দুর্লভ ‘সবুজতাউরা’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
সৌন্দর্যে সবার থেকে আলাদা দুর্লভ ‘সবুজতাউরা’  সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া পাখি ‘পাতি সবুজতাউরা’। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: বনতল ছেয়ে আছে ঝিরি বাতাসে। কাছে-দূরের পাতারা নড়ছে বনে।

বাতাস যখনই তার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গাছেদের গাঘেঁষে তখনই তারা তাদের অঙ্গ অর্থাৎ পাতা নাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বাতাসকে। আবার কিছুক্ষণ পর সব স্থির। চারদিক শান্ত। পরক্ষণেই চঞ্চলতা, পরক্ষণেই শান্ত প্রকৃতির এমনই সব বিচিত্র খেয়াল!

এমন এক দৃশ্যের ভেতর হঠাৎই একটি দারুণ সুদর্শন পাখির আবির্ভাব। ডাল আর পাতাদের আড়ালে সে তখন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল। উন্মুক্ত হতে দেয়নি। ফলে দূর থেকে খালি চোখে তাকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভরসা রাখতেই হয় সময়ের ওপর।  

ততক্ষণে গাড়িয়ে গেছে কিছুটা সময়। বনের বাইরের দিকটাতে গাছগাছালি ঘনত্বহীন। দুই-চারটা করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বনপ্রান্তরে। সে গাছগুলোকে নিচ থেকে ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করা যায়, অসুবিধা হয় না। অন্তত বনের একপাশের ঘন গাছেদের তুলনায় অপর পাশের গাছগুলো পুরো অবয়বে দেখা যায়। সেই দারুণ সুদর্শন পাখিটি উড়ে এসে তখন ওই দু-চারটি গাছের একটি বসেছে। এবার তার নিজেকে উন্মুক্ত হয়ে মেলে ধরার মাহেন্দ্রক্ষণ।  

দারুণ সুদর্শন সেই পাখিটির পুরো শারীরিক সৌন্দর্যটাকে মনে গেথে ফেলার নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছিল তখন। কেননা, আলোকচিত্র তোলা কোনো যন্ত্র সাথে ছিল না। বাড়িতে এসে পাখিগবেষকদের বইপত্র, প্রকাশনা ঘেঁটে নিশ্চিত হওয়া গেল সেই সুন্দরী পাখিটির নাম ‘সবুজতাউরা’। সৌন্দর্যে সে আসলেই সব পাখি থেকে একেবারে আলাদা।  

বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখিগবেষক, লেখক এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এ পাখিটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, এই পাখিটির নাম আমরা রেখেছি ‘পাতি সবুজতাউরা’। এর ইংরেজি নাম Common Green Magpie এবং বৈজ্ঞানিক নাম Cissa chinensis। কর্ভিডি পরিবারের অন্তর্গত সিস্সা গণের এই পাখিটি পৃথিবীতে রয়েছে তিন প্রজাতির। তার মাঝে আমাদের বাংলাদেশে একটি প্রজাতির উপস্থিতি বা বিচরণ রেকর্ড করা গেছে। পাখিটি বাংলাদেশে দুর্লভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ খুব কম দেখা যায়। চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনগুলোতে মাঝে মাঝে পাওয়া যায়।  

তিনি বলেন, পাখিটি বড় আকারের বনচর পাখি। দৈর্ঘ্য ৩৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩০ গ্রাম। এদের দীর্ঘ দেহ। মোটা ঠোঁট। ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া লম্বা লেজ। পালকের প্রধান রং সবুজ। অন্যান্য পাখিদের মতো এর ঠোঁটের গোড়ায় সরু পালকের গোঁফ নেই। এদের রয়েছে রক্ত-লাল চোখ এবং প্রবাল-লাল পা।  

পাখিটির স্বভাব ও খাদ্যতালিকা সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন, ঘন চিরসবুজ বনের গিরিপথ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। পাতার আড়ালে ঘুরে ঘুরে এরা শিকার খোঁজে। ছোট ব্যাঙ, টিকটিকি, ছোট সাপ, ছোট পাখি, পাখির ডিম, পোকা-মাকড় প্রভৃতি এদের খাবার।  

শিকারের ফাঁকে ফাঁকে এরা আনমনা হয়ে মধুর স্বরে শিস দেয় বলে জানান ওই পাখি বিশেষজ্ঞ।  

জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থা ‘আইইউসিএন’ (বাংলাদেশ) এর লালতালিকায় ওই পাখিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ পাখি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।