নেত্রকোনা: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ১০টি ইটভাটা রয়েছে। তবে একটি ভাটারও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন না মেনে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে এসব অবৈধ ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। চরম হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। এছাড়া এসব ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য কৃষিজমির উর্বর মাটি (টপসয়েল) ব্যবহার করার ফলে কমছে ফসলি জমিসহ উৎপাদন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ১০টি ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা মো. দেলোয়ার হোসেন ভুঁইয়া দুলাল কেন্দুয়া-মদন সড়কের পাশে কুণ্ডলীতে শ্মশ্বানঘাট এলাকায় ফসলি জমিতে শাপলা ব্রিকস, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলামের ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন মিয়া কেন্দুয়া-নেত্রকোনা সড়কের রামপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে এএনবি ব্রিকস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের সিংহেরগাঁও গ্রামের ভেতর সিংহেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফসলি জমিতে সানি ব্রিকস, ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম দরবেশ রামপুর-তেলিগাতী সড়কের পাশে বীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ফসলি জমিতে ঢাকা ব্রিকস, মদিনা প্রবাসী জজ মিয়া নিজ গ্রাম সিংহেরগাঁও গ্রামের ফসলি জমিতে স্বর্ণা ব্রিকস, বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলাম কেন্দুয়া-নেত্রকোনা সড়কের সিংহেরগাঁও ক্লাবঘর সংলগ্ন স্থানে টিআইবি ব্রিকস, উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের উলুয়াটি গ্রামের মো. শহীদুল্লাহ নিজ গ্রামের হাওরে ফসলি জমিতে এএসটি ব্রিকস, আওয়ামী লীগ নেতা ও শিল্পপতি জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ভাই শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া বাদল উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের মরিচপুর-কালিয়ান এলাকায় ফসলি জমিতে একতা ব্রিকস, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিজানুর রহমান মিজান উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের রাজিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফসলি জমিতে হিমালয় ব্রিকস এবং একই ইউনিয়নের গোগ গ্রামের ভেতর গোগ জাগরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফসলি জমিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক আহম্মেদ এইচএসবি ব্রিকস নামে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাটাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ভাটাতেই পুরোদমে ইট প্রস্তুতের কাজ চলছে। কিছু ভাটায় শুরু হয়েছে ইট পোড়ানোর কাজ। খোলা আকাশের নিচে যত্রতত্র রাখা হয়েছে কয়লা। নিয়ম না থাকলেও প্রত্যেকটি ভাটাতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে দেখা গেছে শিশুদেরও।
নেত্রকোনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, কেন্দুয়া উপজেলার কোনো ইটভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। উপজেলার ১০টি ভাটাই অবৈধ। ২০২১ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এসব ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়। কিছু ভাটাকে অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। সবশেষে পর্যায়ক্রমে সবকটি ভাটার বিরুদ্ধেই আদালতে মামলা করা হয়। মামলাগুলো চলমান রয়েছে এবং এসব ভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
একতা ব্রিকসের মালিক শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া বাদল বলেন, কেন্দুয়ার সবগুলো ইটভাটার ছাড়পত্রই বাতিল করে দিয়ে আদালতে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আদালতে দায়ের করা মামলার ঘটনায় আমি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে ইটভাটার কাজ শুরু করেছি। একই কথা বলেন অন্য ভাটাগুলোর মালিক ও ভাটা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজাররা।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী শাহ আলী তৌফিক রিপন বলেন, এসব অনুমোদনহীন ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রামের নিটোল পরিবেশ আর মানবদেহের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ভয়ানক বিষয় হলো কয়েকটি ভাটা রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই। অপরিকল্পিত ইটভাটা স্থাপনের ফলে গ্রামের বাতাসে অক্সিজেন কমে গিয়ে বাড়ছে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইডের উপাদান। কেন্দুয়া উপজেলাকে একটা ভয়ানক পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে অতি সত্তর যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, ইটভাটাগুলোতে ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি (টপসয়েল) কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে এবং কৃষিজমি ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাই এসব ইটভাটা বন্ধ করা জরুরি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, এসব ইটভাটায় অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং ভাটাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
আরএ