নোয়াখালী: একটি বাড়িতে শত বছর ধরে বিচরণ করছে হাজারো পাখি। নানা প্রজাতির পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখর থাকে ওই বাড়ির চারপাশ।
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির ছুটে বেড়ানোর মনোরম দৃশ্যে মুগ্ধ স্থানীয় এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা। প্রকৃতিগতভাবে এখানে তৈরি হয়েছে পাখির অভয়ারণ্য। জনশ্রুতি রয়েছে, পাখিদের নিয়ে নানা রহস্যময় গল্প।
জানা যায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের সাতরা গ্রামের শরফুদ্দিন পাটোয়ারী বাড়িতে বসবাস ৩৬টি পরিবারের। বাড়ির সামনে রয়েছে দুইটি পুকুর। পুকর পাড়ে রয়েছে অনেকগুলো বড় বড় গাছ। শত বছর ধরে পুকুর পাড়ের এ গাছগুলোতে আবাসস্থল বানিয়েছে হাজার হাজার পাখি।
পাখিগুলো প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় এখানে আসে। আবার ফজরের নামাজের পরপরই চলে যায় বিভিন্ন স্থানে। সারা দিন খাবার আহরণ করে সন্ধ্যায় পাখিরা ফিরে আসে ওই বাড়িতে। এভাবেই চলছে শত বছর ধরে। এখানে বসতি গড়েছে সাদা বক, পানকৌড়ি, শালিক, কালো শালিক, মাছরাঙা, ঘুঘুসহ অন্তত ১৫ প্রজাতির পাখি।
স্থানীয়রা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জেনেছেন, কেউ এ পাখির কোনো ক্ষতি করলে তারাও বিপদে পড়েন। তাই এসব পাখির কোনো ক্ষতি কেউ করেন না। বাড়ির দুটি পুকুরে চাষ করা মাছের জন্য দিতে হয় না আলাদা কোনো খাদ্য। পাখির বিষ্ঠাই মাছের খাদ্য। এতে সহজে পুকুরের মাছগুলো অল্প দিনে তিন-চার কেজি হয়ে যায়। ভালো দাম পাওয়া যায় মাছের। তবে পুকুরের পানি দেখতে খারাপ লাগলেও তারা ওই পানিই সংসারের নানা কাজে ব্যবহার করেন।
অন্যদিকে জনশ্রুতি আছে, অনেক বছর আগে বেদে জনগোষ্ঠীর এক লোক এখানকার কয়েকটি পাখি মেরে ফেললে তাদের দুই শিশু সন্তানও ওই দিন রাতেই মারা যায়। ভয়ে বেদে জনগোষ্ঠীর লোকজন ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
সাতরা গ্রামের একটি বাড়িতেই পাখিদের এমন অদ্ভূত আবাস ও বিচরণের বিষয়টি দিন দিন নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
উপকূলীয় বন বিভাগ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, শত বছরের ধরে পাখিদের এমন অদ্ভূত বিচরণের জায়গাটি পরিদর্শন করে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রশ্ন রয়েছে, লোকালয়ে পাখিদের এমন বিচরণে কোনো রহস্য আছে, নাকি প্রকৃতিগতভাবে তৈরি হয়েছে পাখির এ অভয়ারণ্য।
আগামীতে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এখনই যথাযথ উদ্যোগ নেবে বন বিভাগ এমনটাই প্রত্যাশা পাখিপ্রেমীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এসআই