ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শুষ্ক মৌসুমে যমুনার তাণ্ডবে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর বিলীন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৪
শুষ্ক মৌসুমে যমুনার তাণ্ডবে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর বিলীন

সিরাজগঞ্জ: শুষ্ক মৌসুমেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১৫ দিনের ভাঙনে প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে এল অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।  

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নে যমুনা নদীর ডান তীরের সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলে আসছে। ধারাবাহিক ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১০টি গ্রামের হাজার হাজার বাড়িঘর, কয়েকশ একর ফসলি জমি। বিলীন হয়েছে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ বহু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা।  

সম্প্রতি শুষ্ক মৌসুমেও জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের সৈয়দপুর এবং পারা মোহনপুর এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে এ অঞ্চলের অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা।  

স্বামী-সন্তান নেই ভাঙন কবলিত আলেয়া খাতুনের। তিনি বলেন, এক সময় তিনি বাঐখোলায় বাস করতেন। নদী ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নেন মনাকোষা গ্রামে। সেখানেও যমুনা হানা দিলে সর্বস্ব হারিয়ে এখন জালালপুরে অন্যের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।

জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে পাচিল গ্রাম পর্যন্ত নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড চলাচল করে। এতে ভাঙনের মুখে পড়ছে এসব এলাকা। শুষ্ক মৌসুমের কারণে কোথাও বাল্কহেড আটকে গেলে রাতে ড্রেজার নিয়ে এসে সেখানে গভীর করা হয়। এভাবে যমুনা নদীর এ অঞ্চলে গভীর ক্যানেল তৈরি হয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জালালপুর মৌজার প্রায় ৩০/৩৫টি বাড়ি ভেঙে ভুক্তভোগীরা নাটোরে চলে গেছেন। সৈয়দপুর, পারা মোহনপুর এলাকায়ও ১৫/২০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।  

একই এলাকার মো. ফজলু, আলী ও নুরুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে নদী ভাঙন রোধে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৭টি প্যাকেজের মধ্যে কয়েকজন ঠিকাদার ব্লক তৈরি করছেন। কোনো কোনো ঠিকাদার কিছুই করেননি। অনেক ঠিকাদার এলাকায়ও আসেননি। জালালপুর এলাকায় ১০ নম্বর প্যাকেজ (জালালপুর) থেকে পাচিল গ্রাম পর্যন্ত দক্ষিণ দিকে কোনো কাজই হয়নি।  

ভাঙন কবলিতরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের পর সরকার নদীর তীর রক্ষায় এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে শুরু করে সাড়ে ছয় কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে ৬৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ কচ্ছপগতিতে চলছে। ফলে ভাঙনের হাত থেকে এখনো রক্ষা পাননি এলাকাবাসী। কিছু এলাকায় ধীরগতিতে কাজ চললেও বেশিরভাগ স্থানে বন্ধ রয়েছে কাজ। এছাড়া নদীর তীর ঘেঁষে বালু ব্যবসায়ীদের বাল্কহেড চলাচল করায় শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন শুরু হয়েছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনার ডান তীর রক্ষায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা বাঁধসহ ৩৩০০ মিটার নদী ড্রেজিং কাজ করছে। এরই মধ্যে ড্রেজিং শেষ হওয়ায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে দুই কিলোমিটার এলাকায় কিছুটা ভাঙন পরিলক্ষিত হয়েছে। বিভিন্ন নৌযানের ঢেউয়ের কারণে ভাঙন হচ্ছে। আগামী বর্ষার আগেই জিওব্যাগ, সিসিব্লক, জিওটিউব দিয়ে এলাকাগুলো মুড়িয়ে রাখতে ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে নদীভাঙন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে পারি।  

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ অর্থ-বছরে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি। বর্ষার আগেই বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট আমরা চাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।