ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ৫-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ৫-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালে বড় ধাক্কা সামলে নেওয়া সুন্দরবন ডুবেছে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানিতে।  
রোববার (২৬ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় এবং সোমবার দুপুরে পাঁচ-সাত ফুট উঁচু জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন।

 

এতে নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে বনের মাঝে থাকা মিঠা পানির পুকুরগুলো। অনেক বন্যপ্রাণীই ভেসে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

বন বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত বন্যপ্রাণী ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সমুদ্র তীরবর্তী দুবলার চর ও ককটা বনবিভাগের কার্যালয়ের জেটি স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বন কর্মীদের থাকার ঘরের জানালার গ্লাস, মিঠা পানির পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সুপেয় পানির ট্যাংক, সোলার প্যানেল ভেঙে গেছে। তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের তোড়ে বনের কটকা এলাকার পুকুরটি বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে গেছে।  

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ঝোড়ো বাতাসের চেয়ে এবার পানির চাপটা বেশি। আসলে সিডর-আইলার চেয়েও এবার পানি অনেক বেশি। সুন্দরবনে আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে এত পানি আগে কখনও দেখিনি। সাধারণ জোয়ারের চেয়ে অন্তত পাঁচ থেকে সাত ফুট বেশি উচ্চতায় পানি উঠেছে করমজলে। কেন্দ্রের রাস্তাঘাট থেকে প্রায় সব জায়গায় কোমর সমান পানি হয়। সাগর উপকূলে বনের দুবলা, কটকা, কচিখালী এলাকায় পানি আরও কয়েক ফুট বেশি ছিল। যেহেতু বনের সব জায়গা তলিয়ে গেছে, এতে বন্যপ্রাণীর বেশ ক্ষতি হওয়ার কথা। অবশ্য বন্যপ্রাণীরা ঝড়-বন্যার সঙ্গে অনেকটাই খাপ খাইয়ে চলতে পারে। তবে হরিণ শাবক ভেসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।  

তবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে করমজল প্রজননকেন্দ্রের কুমির, কচ্ছপসহ অন্যান্য প্রাণীর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।  

হাওলাদার আজাদ আরও বলেন, বনের মধ্যে প্রাণীদের জন্য বেশ কিছু উঁচু স্থান করে দেওয়া হয়েছে। এ টাইগার টিলাগুলোতে কিছু প্রাণী আশ্রয় নিতে পেরেছে। বনের গাছপালার কারণে এ ঝড়ের পুরো ধাক্কাটা পায়নি লোকালয়ের বাসিন্দারা। এখানেই নদীর পাশে গেলে বাতাসের চাপের কারণে আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না। তবে ভেতরে এলে গাছপালার মধ্যে বাতাসের চাপ অনেকটাই কম, মনে হচ্ছে না এত বড় ঝড় হচ্ছে। বনের কারণে ঝড়ের মূল গতি কমে যায়। ফলে লোকালয়ের ক্ষতি কম হয়।  

ভৌগোলিকভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার জনপদ ও বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে সুন্দরবনের অবস্থান। বরাবরের মতো এবারও প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে উপকূল রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এ বনটি।  

সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবন আমাদের উপকূলকে ঠিক মায়ের মতো বুকে আগলে রাখছে। ঝড়ের সময় সে নিজে ক্ষত-বিক্ষত হলেও উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয় না।  
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা মারাত্মক বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে আছড়ে পড়লেও সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে অনেক কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, প্রাণহানিও হয়েছিল আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় দেয়ালের মতো কাজ করে সুন্দরবন। তবে ঝড়ের ফলে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।