ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

রিমালের ক্ষত: চুলা ধরানোর জায়গাটুকুও নেই অনেকের!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
রিমালের ক্ষত: চুলা ধরানোর জায়গাটুকুও নেই অনেকের! কষ্ট করে রান্না করছেন খাদিজা, ছবি: জি এম মুজিবুর

পাথরঘাটা (বরগুনা): ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বিষখালী নদীর পাড়ের অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।  

এ বিষখালীর ভাঙন থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করার জন্য বানানো বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করেন ভূমিহীন খাদিজা-রাসেল দম্পতি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এখন বসবাস তো দূরের কথা, চুলা ধরানোর জায়গাটুকুও নেই।

বিষখালী নদী সংলগ্ন জিনতলা এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে বেড়িবাঁধ ভাঙনের চিত্র, অন্যদিকে ভাঙনকবলিত এলাকায় ভিটেহীন জনগণ। যাদের অনেকের রান্না করার জন্য চুলো বসানোর জায়গাটুকুও নেই।  

কথা হয় রিমালের আঘাতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের বাসিন্দা ভূমিহীন রাসেলের স্ত্রী খাদিজা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বইন্যার পর দুদিন না খাইয়া থাকছি। আড়াই বছরের পোলাডারেও কিছুই খাওয়াইতে পারি নাই, খালি পানি খাওয়াইছি। মোগো এতো কষ্ট কে দ্যাহে; মোগো জীবন ভাঙা গড়ার।  

কান্না জড়িত কণ্ঠে খাদিজা বলেন, কয়েকদিন ধইরা কষ্টে আছি, স্বামীর কামাই তো নাই, কেমনে দিন চলে, আমরাই জানি। সবাই আয় আর যায়। বন্যায় ওয়াপদা তো ভাইঙ্গা গ্যাছে, হেরপর ঘরও ভাঙছে। পরিবারের সবাই মিলে একটু ঘর মেরামত করলেও নিচে কোনো মাটি না থাকায় রান্না ঠিকমতো করা যায় না। আবার বেড়া না থাকায় বাতাসে রান্না করতে কষ্ট হয়।

তিনি জানান, তবে দুদিন ধরে মেরামত করা ঘরে উঠে রান্না শুরু করেছেন। তবে চুলার নিচে মাটি না থাকায় রান্না করতে অনেক কষ্ট হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, রিমালে অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। না খেয়েও মানুষ আছে। একদিন এনএনএস থেকে এক বেলা খিচুড়ি ও পানি দিয়েছে। এলাকার মানুষ অনেক তৃপ্তি সহকারে খাইছে।


২৬ মে রিমালে সব তছনছ হওয়ার পর দুদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে খাদিজাসহ অনেককে। কয়েক ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানিতে ঘরে থাকা চাল, ডালসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী আর বালিশ-কাথা-আসবাবপত্র সব ভেসে গেছে। তাই দুদিন পানি ছাড়া কিছু খাওয়া হয়নি তাদের। তৃতীয় দিন থেকে উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ১০ কেজি চাল ও শুকনো খাবার দিয়েছে। চিড়া-মুড়িসহ অন্যান্য শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটে তাদের। পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও থেকে দিনে দুবার খাবার দিচ্ছে অনেককে।  

সরেজমিন দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল বিষখালী-বলেশ্বর পাড়ের সবখানে রেখে গেছে ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন। টাকার জন্য অনেকে ভেঙে পড়া বাড়িঘর ঠিক করতে পারছেন না। যে কারণে ঝড় হওয়ার আটদিনেও অনেকেই প্রতিবেশীর ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার অনেকে কোনোমতে মেরামত করে ঘরে উঠতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।