মেলায় পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।
ঢাকা: বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় জীবনের আবহমান সংস্কৃতির অংশ। আমাদের সংস্কৃতিতে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ নিয়ে আসে নতুনের বার্তা, যা নব নবরূপে একাত্ম হয়ে বিশেষ কৃষ্টির মহিমায় রূপায়িত হয়।
জাতি ধর্মনির্বিশেষে এ দিনটি বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়ে থাকে। বাঙালি জাতি নিজ মেধা, মনন ও চিন্তা দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করে নববর্ষের নানা অনুষ্ঠান। সেই উদযাপনে সামিল হয়ে করোনা ভাইরাস মহামারিতে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছে বৈশাখী মেলা। ঐতিহ্যবাহী জামদানি, তাঁতের শাড়ি, হরেক রকমের পাটপণ্যের পাশাপাশি কাঠের পুতুল, মাটির টেপা পুতুল, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা এই মেলায়। সোমবার (১৮ এপ্রিল) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে এই মেলা ঘুরে দেখা যায়, এতে বিনোদনের জন্য আছে নানা ধরনের লোকজ অনুষ্ঠান, যা কালে কালে আমাদের দিয়ে আসছে অনাবিল আনন্দ। শিশু-কিশোরদের আকর্ষণের জন্য আছে নাগরদোলা, বায়োস্কোপ। এ মেলা যেন বাঙালি জীবনের এক অনন্য লোকায়ত সংস্কৃতির ধারক। মেলায় আগত দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলা নববর্ষে আমাদের গ্রামবাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির অংশ বৈশাখী মেলা যুগ যুগ ধরে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে চলেছে। তবে অতীতের মতো পল্লির আনাচে-কানাচে বৈশাখী মেলার দেখা মেলে না। আগে গ্রামের মানুষ, নারী-শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সবাই অপেক্ষা করে থাকত বৈশাখী মেলার বিশেষ দিনের জন্য। মেলায় আগমন ঘটত দূরদূরান্তের নানা বর্ণ ও শ্রেণির মানুষের। অনেকেই সারা বছরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত মেলা থেকে। শহরে এমন আয়োজন তাই সত্যিই অনন্য। আরেক দর্শনার্থী ইমরান হোসেন বলেন, বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য এ মেলা একসময় নির্দিষ্ট দিনে শুধু গ্রামে বসলেও এখন শহরে মেলার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে পাকাপোক্তভাবে। শহুরে সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েও যদি বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের বৈশাখী মেলা টিকে থাকে, তাহলে হয়তো হারিয়ে যাবে না আমাদের এ লোক উৎসব।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, বায়োস্কোপের প্রতিও রয়েছে দর্শনার্থীদের আলাদা ভালোবাসা। বিশেষ করে যারা শিশুদের নিয়ে এসেছেন, তারা শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বায়োস্কোপের সঙ্গে। শিশুরাও বেশ আনন্দিত। আর বেশি আনন্দিত নাগরদোয়াল চড়ে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির আয়োজনে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা খোলা থাকবে এই মেলা। এর আগে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বৃহস্পতিবার দুপুরে পহেলা বৈশাখের এই কারুপণ্য মেলার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি বলেন, এই বৈশাখী মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। আমরা যেখানে থাকি না কেন, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা বাঙালি। কারুপণ্যের এ মেলায় আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে যেমনি তুলে ধরছি, তেমনিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও আমরা গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
এইচএমএস/এএটি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।