ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

অভিষেকেই ইতিহাস গড়ার পথে বসুন্ধরা কিংস

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
অভিষেকেই ইতিহাস গড়ার পথে বসুন্ধরা কিংস বসুন্ধরা কিংস

ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে ফেডারেশন কাপের পর্দা নামতে চলেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবানহনী লিমিটেডকে এই ম্যাচে হারাতে পারলেই অনন্য এক ইতিহাসে নাম লেখাবে নবাগত বসুন্ধরা কিংস। ফেডারেশন কাপের ৩৮ বছরের ইতিহাসে নবাগত কোনো দলের শিরোপা জেতার রেকর্ড নেই। এবারের আসরে বাকি সব দলের চেয়ে শক্তিমত্তায় অনেকটা এগিয়ে থাকা বসুন্ধরা কিংস কি পারবে অভিষেকেই ইতিহাস গড়তে?

ইতিহাস গড়ার হাতছানি অপেক্ষা করছে আবাহনীর জন্যও। শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠেয় ম্যাচটি জিতলেই দ্বিতীয়বারের মতো হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়বে ঐতিহ্যবাহী দলটি।

এছাড়া মোহামেডানকে হটিয়ে সবচেয়ে বেশি (১১ বার) শিরোপা জয়ের রেকর্ডও নিজেদের করে নেবে ধানমন্ডির ক্লাবটি। তবে শিরোপা জেতার সম্ভাবনা যারই থাক না কেন, ম্যাচটি যে হাড্ডাহাড্ডি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে সেরা দল গড়তে কোনো কার্পণ্য করেনি নবাগত দল বসুন্ধরা কিংস।  দল হিসেবে নবাগত হলেও দেশসেরা ফুটবলার আর মানসম্পন্ন বিদেশী ফুটবলারের সন্নিবেশ ঘটিয়েছে তারা। দলে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোস্টারিকান তারকা ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস আছেন। আছেন মাসুক মিয়া জনি, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুশান্ত ত্রিপুরা, তৌহিদুল আলম সবুজের মতো তারকা ফুটবলাররা। কোচ হিসেবে আছেন স্প্যানিশ অস্কার ব্রুজোন।  

দেশ-বিদেশের নামী তারকাদের নিয়ে দল গঠন করে  নিজেদের প্রথম আসরেই বাজিমাত করেছে বসুন্ধরা কিংস। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই মোহামেডানের মতো দলকে অনায়াসে হারিয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে রাজার বেশে নিজেদের আগমনী বার্তা দিয়ে রেখেছে দলটি। এরপর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে ড্র করে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখার পর কলিনদ্রেসের হ্যাটট্রিকে টিম বিজেএমসিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় নবাগত বসুন্ধরা কিংস। আর সেমিফাইনালে তারা শেখ রাসেলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। এখন পর্যন্ত পরাজয় দেখেনি দলটি।

অন্যদিকে আবাহনী এই আসরে চারটি ম্যাচ খেলে তিন ম্যাচে জয় আর এক ম্যাচে হেরেছে। গ্রুপ পর্বে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে জিতলেও হেরে গেছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কাছে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা হারিয়েছে আরামবাগকে আর সেমির লড়াইয়ে হারিয়েছে শেখ জামালকে।

আর মাত্র একটা ম্যাচ, তাহলেই ইতিহাস গড়া হয়ে যাবে বসুন্ধরা কিংস।  অভিষেকেই শিরোপা জেতার রেকর্ড তো আছেই, তাছাড়া এই শিরোপা জয় তাদের প্রথম আসর থেকে সোজা পৌঁছে দেবে এশিয়ার চ্যাম্পিয়নস খ্যাত এএফসি ক্লাব টুর্নামেন্টে।  

এই ইতিহাস গড়ার পথে বসুন্ধরা কিংসের তারকা খেলোয়াড় কলিনদ্রেসের দিকেই নজর থাকবে সবার। এবারের আসরে মোট ৪টি গোল করেছেন এই কোস্টারিকান। আছে একটি হ্যাটট্রিকও। বিজেএমসির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই ৩ গোল করে প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন এই রাশিয়া বিশ্বকাপের তারকা।

বসুন্ধরা কিংসের যেমন কলিনদ্রেস আছেন, আবাহনীরও তেমন সানডে চিজোবা আছেন। চলতি আসরে একটি হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল করেছেন এই নাইজেরিয়ানও। এই দুই তারকার মধ্যে কে এগিয়ে? 

এমন প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) ফাইনাল পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ আবু ফয়সাল আহমেদ বললেন, ‘আমি কলিন্দ্রেসকেই এগিয়ে রাখব। সে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সে গোল বানিয়ে দিতে পারে, গোল করতে পারে। সানডে ভালো খেলোয়াড়। তবে তার শুধু গোল করার দিকেই বেশি নজর থাকে। ’

আবার একই প্রশ্নের জবাবে আবাহনীর কোচ জাকারিয়া বাবু সানডেকেই এগিয়ে রাখলেন, ‘দুই জনের মধ্যে তুলনা করলে আমি সানডেকেই এগিয়ে রাখবো। সানডে তার স্বাভাবিক খেলায় ফিরে এসেছে। শেষ দুই ম্যাচে সে গোলও পেয়েছে। ’

এতো গেল দুই দলের দুই তারকার কথা। এবার যে কারণে এই লড়াই তথা আকাঙ্ক্ষিত শিরোপার লড়াই নিয়ে দুই দলের ভাবনা কেমন তাও জেনে নেওয়া যাক।  

আবাহনীর কোচ জাকারিয়া বাবু নিজেদের ফেবারিট বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘বসুন্ধরা কিংস ভালো দল। তবে তাদের আমরা অন্য দশটা প্রতিপক্ষের মতোই ভাবছি। বসুন্ধরা কিংসকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ম্যাচে আমরাই ফেবারিট। ইনশাল্লাহ আমাদের ছেলেরা তাদের সেরাটা দিয়ে খেলেই আবাহনীর ঐতিহ্য ধরে রাখবে। শিরোপা ঘরে তুলবে। ’

আর আবাহনীর অধিনায়ক সোহেল বলেন, ‘এটা আমার কিংবা আমাদের প্রথম ফাইনাল নয়। এর আগেও আমি বেশ কয়েকটি ফাইনাল খেলেছি। কারণ, আমি দশ বছর ধরে আবাহনীর হয়ে খেলছি। আমাদের দলে কোনো ইনজুরি নেই। সবাই সুস্থ্য আছে। আগামীকাল মাঠে আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে খেলেই শিরোপা জিতব। ’

এদিকে বসুন্ধরা কিংসের প্রধান কোচ ব্রুজোনের বদলে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হওয়া আবু ফয়সাল আহমেদ বললেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। গ্রুপ পর্ব থেকেই ভালো খেলার চেষ্টা করেছি। যদিও গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচ আমরা ড্র করেছি। তবে সেটা অতীত। এখন আমরা ফাইনালে। আবাহনীর মতো বড় দলকে হারিয়ে আমরা প্রথমবার এসেই চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। ’

আর বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক তৌহিদুল আলম সবুজ বললেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই আমরা খেলব। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই দল গড়েছে বসুন্ধরা। শিরোপা থেকে মাত্র এক ধাপ দুরে আমরা। ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা এএফসি কাপ খেলতে চাই। ’

আবাহনী দীর্ঘ সময় দেশের ফুটবলে রাজত্ব করছে। এবার অনেকটা সময় বাদে তাদের সত্যিকারের শক্ত প্রতিপক্ষ দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে। একেবারে নতুন আঙ্গিকে, নতুন ধরনের দল। ‘বর্ন টু বিট’ দলীয় স্লোগান নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে সেরা প্রস্তুতি নিয়েই আসরে নেমেছে বসুন্ধরা কিংস। এবার শুধু শেষটা রাঙানোর অপেক্ষা।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।