লস ব্ল্যাঙ্কোসদের সিনিয়র স্কোয়াডে রেইনিয়ের যোগ দিয়েছেন মার্সেলো, এদের মিলিতাও, কাসেমিরো, ভিনিসিয়াস জুনিয়র এবং রদ্রিগোর সঙ্গে। রিয়ালে এর আগে এত বেশি ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়ের সম্মেলন দেখা যায়নি।
সর্বশেষ ২০০৫/০৬ মৌসুমে হুয়ান রামোন লোপেজের অধীনে খেলেছিলেন পাঁচ ব্রাজিলিয়ান-রোনালদো নাজারিও, রবার্তো কার্লোস, চিচিনহো, হুলিও বাপতিস্তা এবং রবিনহো।
রিয়ালের ট্রান্সফার প্রক্রিয়া যারা সামলান তাদের কাছে ব্রাজিলিয়ানদের গুরুত্ব সবসময় বেশিই থাকে। এখন এটা আগের চেয়ে বেড়েছে, কারণ দায়িত্বে আছেন হুনি কাতাফাত, যিনি বরাবর ব্রাজিলের মার্কেটে নজর রাখেন।
রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ নিজেও ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন। তাছাড়া ২০১১ সালে নেইমারকে কেনার সব চেষ্টা বিফল হওয়ার পর তার আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার ফুটবলারদের তিনি মিস করতে চান না।
রিয়ালের বর্তমান স্কোয়াডে সবচেয়ে পুরোনো ব্রাজিলিয়ান মার্সেলো। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে অর্থাৎ প্রায় ১৩ বছর আগে ৬ মিলিয়ন ইউরোতে স্পেনের রাজধানীতে পা রাখেন তিনি। তবে স্প্যানিশ জায়ান্টদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তাকে তিন বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়। এরপর লেফট-ব্যাকে নিয়মিত হতে শুরু করেন তিনি আর এরপরের ঘটনা তো ইতিহাস।
২০১৩ সালে ৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে সাও পাওলো থেকে রিয়ালে আসেন কাসেমিরো। তবে মিডফিল্ডে তার সেরা ফর্মের দেখা পেতে কোচ হিসেবে জিনেদিন জিদানের আসার অপেক্ষায় থাকতে হয় তাকে।
এরপর ব্রাজিল থেকে আরও তিন খেলোয়াড় কেনার পেছনে মূল পরিকল্পনা ছিল পেরেজ আর কালাফাতের। কারণ, ২০১৭ সালে পিএসজি যখন রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’র বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে কিনে নেয়, এরপর শীর্ষ মানের খেলোয়াড়দের কেনা কঠিন হয়ে যায়।
বর্তমান দলবদলের বাজারে কম মূল্যে ভালো খেলোয়াড় কেনা প্রায় অসম্ভব। এমনকি কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তরুণ প্রতিভাকে কিনতে গেলেও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হতে পারে। ফলে সম্ভাব্য বড় তারকাকে আগেভাগেই কিনে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
পিএসজির মতো অযথা বড় স্বপ্ন দেখা রিয়ালের মতো ক্লাবের সাজে না। পিএসজি যেখানে অর্থের ঝনঝানানি দেখিয়েও এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় পর্যায়ে কোনো সাফল্য পায়নি, সেখানে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব রিয়াল। ফলে দেখেশুনে অর্থ খরচ করার পথে হাঁটাকেই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন পেরেজ।
রিয়ালের আর্থিক অবস্থাও আর আগের মতো নেই। গত মৌসুমের শেষে ইডেন হ্যাজার্ডকে কিনতে গিয়ে নিজেদের ক্লাব রেকর্ড ভাঙতে হয়েছে। এরপর আর শীর্ষ পর্যায়ের কোনো তারকাকে কেনা ক্লাবটির পক্ষে কঠিন। এজন্যই ভবিষ্যৎ তারকাদের পেছনে ছুটছেন কালাফাত, যাদের দাম একসময় ১০০ মিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে যাবে।
ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে যখন ৫০ মিলিয়ন ইউরোয় কেনা হলো অনেকের চোখ তখন কপালে, কিন্তু রিয়াল এই জুয়াটা বুঝেশুনেই খেলেছে। এরপর রদ্রিগো আর সর্বশেষ রেইনিয়েরের ক্ষেত্রেও একই পথে অবলম্বন করেছে রিয়াল। এই তিন তরুণের সম্মিলিত মূল্য ১২৫ মিলিয়ন ইউরো, যার ফলে ক্লাবটি প্রায় তিনগুণ অর্থ সাশ্রয় করেছে।
একটি নির্দিষ্ট দেশ থেকে একসঙ্গে এত খেলোয়াড় কেনা অবশ্য রিয়ালের জন্য নতুন কিছু নয়। ব্রাজিল ছাড়াও ২০০৮/০৯ মৌসুমে রামোন কালদেরনের আমলে ডাচ তারকাদের সম্মেলন ঘটেছিল। সেবার ওয়েসলি স্নেইডার, আরিয়েন রোবেন, রাফায়েল ভ্যান ডার ভার্ট, ক্লাস-ইয়ান হান্টেলার, রয়স্টন ড্রেন্থ এবং রুড ফন নিস্টলরয়কে রিয়ালের জার্সিতে দেখা গেছে।
তবে ডাচ তারকাদের ওই ঝাঁক এক মৌসুমের বেশি টিকতে পারেনি। ২০০৯/১০ মৌসুমে কয়েকজনের বিদায় ঘটে যায়। রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকরা নিশ্চয় ব্রাজিলিয়ান গ্রুপের ক্ষেত্রে এমন কিছু হোক তা চাইবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস