প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষসেরা এওয়ার্ডের জন্য ফুটবলারদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। কোপা আমেরিকা জিতে জাতীয় দলের দীর্ঘ ২৮ বছরের আন্তর্জাতিক শিরোপা খরা মেটানো লিওনেল মেসির সঙ্গে তালিকায় রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার জুনিয়র ও পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
সোমবার (২২ নভেম্বর) ২০২১ সালের ‘দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’ নির্বাচন করার জন্য প্রাথমিকভাবে ওয়েবসাইটে ১১ জন ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে ফিফা। বর্ষসেরা হওয়ার দৌড়ে যেখানে মেসি-রোনালদোর সঙ্গে প্রতিযোগীতায় রয়েছেন ইতালির হয়ে ইউরো ও চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী জর্জিনিয়ো, রবের্ত লেভানদোভস্কি, কিলিয়ান এমবাপে ও করিম বেনজেমার মতো তারকারা।
গত মৌসুমে বার্সেলোনার ফর্ম খরার মধ্যেও উজ্জ্বল ছিলেন লিওনেল মেসি। ক্লাবটির অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যেও কাতালানদের যেন একাই টেনেছেন তিনি। গত মৌসুমে তাদের হয়ে করেছেন লা লিগার সর্বোচ্চ ৩০ গোল। দলকে জিতিয়েছেন কোপা দেল রে। জিতেছেন রেকর্ড অষ্টম বারের মতো পিচিচি ট্রফি।
ক্লাবের পারফরম্যান্স বিবর্ণ থাকলেও মেসির জাতীয় দলের পারফরম্যান্স গত মৌসুমে ছিল দুর্দান্ত। দলের মিলিত পারফরম্যান্স ও মেসির ব্যক্তিগত চেষ্টায় গত জুলাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাঠেই হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আর মেসি পান ক্যারিয়ারে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতার স্বাদ। টুর্নামেন্টে চারটি গোলের পাশাপাশি পাঁচটিতে সহায়তা করে নিজের যোগ্যতার জানান দিয়েছেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। এমন দারুণ ফর্ম দেখিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের তালিকায়।
অপরদিকে মেসির মতো তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গত মৌসুমে জুভেন্টাসের ফর্ম খরার মধ্যেও ব্যক্তিগত ফর্মে ছিলেন উজ্জ্বল। ইতালিয়ান লিগ সিরি আ’তে করেন সর্বোচ্চ ২৯ গোল। গড়েন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা ও সেরি আ’তে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড। ক্লাবটির হয়ে ইতালিয়ান কাপ ও ইতালিয়ান সুপার কাপও জেতেন পর্তুগিজ এই তারকা। তাছাড়া জাতীয় দলের হয়ে গত মৌসুমে কয়েকটি রেকর্ডও গড়েন তিনি। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আগের রেকর্ড গোলদাতা আলি দাইকে স্পর্শ করেন রোনালদো।
ফিফার সংক্ষিপ্ত তালিকায় গতবার জায়গা না পেলেও এবার ঠিকই রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়র। পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লিগ ওয়ানে ব্যক্তিগত ফর্মে ছিলেন উজ্জ্বল। জাতীয় দলের হয়েও কোনো অংশে কম ছিলেন না তিনি। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল হারলেও তিনি পেয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। ব্রাজিলিয়ান এ ফরোয়ার্ডের সঙ্গে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তার সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পেও।
এবারের বর্ষসেরার দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে থাকবেন জর্জিনিয়ো। ইংলিশ ক্লাব চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আরেক জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেন এই মিডফিল্ডার। জাতীয় দলের হয়ে জিতেন ইউরোপ সেরার ট্রফি। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে মাঝমাঠে তার অবদান আগ্রাহ্য করার মতো নয়। ইতালিয়ান এই তারকার সঙ্গে তালিকায় রয়েছেন তার সতীর্থ এনগোলো কন্তেও। চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোয় তার অবদান অনেকটাই বেশি। মাঝমাঠে থেকেও ক্লাবটির হয়ে পুরো মাঠ একাই দখল করে রেখেছিলেন ফরাসি এ তারকা।
মেসি, রোনালদো, নেইমার ও জর্জিনিয়ো ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছেন লিভারপুলের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মোহামেদ সালাহ, বায়ার্নের হয়ে বুন্দেসলিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা রবের্ত লেভানদোভস্কি, ম্যানসিটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা, রিয়ালের হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা করিম বেনজেমা ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ধারাবাহিক গোল করা নরওয়ের গোলমেশিন আর্লিং হালান্ড।
একনজরে ফিফা বর্ষসেরার লড়াইয়ে থাকা ১১ জনের তালিকা:
- লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা ও পিএসজি/বার্সেলোনা)
- ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/জুভেন্টাস)
- নেইমার (ব্রাজিল ও পিএসজি)
- জর্জিনিয়ো (ইতালি ও চেলসি)
- এনগোলো কন্তে (ফ্রান্স ও চেলসি)
- কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স ও পিএসজি)
- মোহামেদ সালাহ (মিশর ও লিভারপুল)
- রবের্ত লেভানদোভস্কি (পোল্যান্ড ও বায়ার্ন মিউনিখ)
- করিম বেনজেমা (ফ্রান্স ও রিয়াল মাদ্রিদ)
- কেভিন ডে ব্রুইনা (বেলজিয়াম ও ম্যানচেস্টার সিটি)
- আর্লিং হালান্ড (নরওয়ে ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
আরইউ