কলকাতা: বিদ্যা ও শিল্পের দেবী আরাধনায় মেতে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বাড়ি বাড়ি হচ্ছে সরস্বতী পূজা।
তবে এবার সরস্বতী পূজা নিয়েও পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনা কম হচ্ছে না। অনেকে বলছেন, রাজ্যে যেখানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সেখানে শিক্ষা কী করে থাকে! শিক্ষাবিহীন সরস্বতী পূজা মানে বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। অনেকের মত, যারা শিক্ষা বেঁচে জেলহাজতে, শিক্ষার দেবী তাদের সুমতি ফেরাক!
তবে এই বিতর্কের মধ্যে আরও এক বিতর্ক গত কয়েকদিন ধরে মাথাচাড়া দিয়েছিল। মমতার দলের ছাত্র সংগঠন এক প্রকার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল, কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও সরস্বতী পূজা করেই ছাড়বে। অবশেষে পূজা হচ্ছে, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে নয়। সরস্বতী আরাধনা হচ্ছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ডানদিকের ফুটপাত ঘেঁষে ছোট মণ্ডপ তৈরি করে। সেখানেই বসানো হয়েছে সরস্বতীর মূর্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে সেখানে পূজা দিলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।
প্রেসিডেন্সির তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক প্রান্তিক চক্রবর্তী বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি না পেয়ে বাইরেই পূজা করছি। আমরা সংঘাত চাই না। তাই এই সিদ্ধান্ত। আশা করি, ভবিষ্যতে একদিন ক্যাম্পাসের ভেতরে পূজা হবেই।
গত কয়েক দিন প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সরস্বতী পূজা করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। ছাত্র পরিষদ চেয়েছিল, ক্যাম্পাসের ভেতরে সরস্বতী পূজা করতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে অনুমতি দেননি। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল, প্রেসিডেন্সি বছরের পর বছর ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা ছাড়া কোনো ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। সেখানে সরস্বতী পূজা করতে দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে, শাসকদলের ছাত্র সংগঠন জানিয়েছিল, ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজা তারা করেই ছাড়বে।
কলকাতার ১৫০ বছরের প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতর কখনও সরস্বতী পূজা হয়নি। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতার কথাই বলেছেন বরাবর। কিন্তু প্রেসিডেন্সি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যুক্তি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির সঠিক সাংবিধানিক অর্থই জানেন না। তা জানলে তাঁরা এই যুক্তিতে দেখিয়ে পূজায় বাধা দিতেন না। সংবিধানে বলা আছে, ধর্মনিরপেক্ষতা একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। ধর্মনিরপেক্ষ তাকেই বলা হয়, যেখানে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজের মতো আচার-অনুষ্ঠান উৎসব পালন করতে পারবেন। কোথাও বলা নেই ধর্মনিরপেক্ষতার মানে কোনো মানুষ তাঁর নিজস্ব ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারবে না।
যদিও প্রেসিডেন্সির এক পক্ষের শিক্ষার্থীদের কথায়, তৃণমূল যা করছে সেই একই কাজ বিজেপিও করে। তৃণমূল একটি রাজনৈতিক দল, তারা প্রেসিডেন্সিতে ধর্মকে টেনে এনে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ম বা রাজনীতি কোনোটারই স্থান নেই। তা হলে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের তফাত রইল কোথায়?
যদিও পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পূজা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন যেখানে পূজা করে দেখিয়ে দেবে বলে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকের প্রতিক্রিয়া ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে এসব মানায় না। আমি চাই না কেউ জেদ করে বসে থাকুক। তবে অবশেষে পূজা হচ্ছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নয়, গেটের বাইরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ