কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে এক ছাত্রী হত্যার কারণে শিক্ষার্থী আন্দোলনে উত্তপ্ত গোটা বাংলা। ছাত্রী হত্যার ঘটনায় দিনভর রাজনৈতিক উত্তেজনা পারদ চড়ল বঙ্গজুড়ে।
পৃথক আন্দোলন রাজপথে সামিল হয়েছে সবকটা রাজনৈতিক দল। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ জানালেন কলেজ-ক্যাম্পস ও রাজপথে। চিকিৎসক ন্যায়ের বিচার বিক্ষোভে সামিল হয় হাসপাতালগুলোয়। ফাঁসির দাবিতে রাজপথে নামেন মমতা। পৃথকভাবে মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি নেয় বাম ও বিজেপি। সেই সন্ধিক্ষণে মুখ খুললেন নিহ ছাত্রীর বাবা। সব মিলিয়ে শুক্রবারও কলকাতা একপ্রকার অচল হয়ে ওঠে।
ছাত্রী হত্যার তদন্ত পুলিশের থেকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। এবার সিবিআইয়ের কাছে ফাঁসির দাবিতে রাজপথে নামেন মমতা। মৌলালি থেকে পদযাত্রা করেন তিনি। মমতার সঙ্গেই সেই মিছিলে পা মেলান রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, রচনা ব্যানার্জি, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, শতাব্দি রায়, দোলা সেন, বিধায়ক অদিতি মুন্সি প্রমুখ। নেত্রীর নেতৃত্বে বিকেল ৩টায় বিশাল জমায়েতে স্তব্ধ হয়ে যায় কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মধ্য কলকাতা।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এদিনও মমতার মুখে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের ঘটনা উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিজেপি কী ভাবছে? বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটেছে, এত ছাত্র মারা গেল। বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারি না, আমি বলিও না এটা ভারতের ব্যাপার। কিন্তু আমি শুধু বলব, ভাববেন না আপনারা অন্দোলোন করে আমাকে দুর্বল করে দেবেন।
বাংলাদেশের সাময়িক পরিস্থিতির জন্য মোদী সরকারকেই নিশানা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, লজ্জা করে না? মাত্র ৭ দিনের মধ্যে পাল্টি খেয়ে গেলেন? প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কেন বলবে যে, ভারত যেন আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ না করে। এর আগে কোনোদিনই এমনটা হয়নি। এ প্রথম আপনাদের আমলে এসব শুনতে হচ্ছে।
আরজিকর কাণ্ডের ঘটনা নিয়ে মমতা বলেছেন, একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এটা বাংলার কেউ সমর্থন করে না। আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি দোষীদের শাস্তি হোক এবং এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি, যাতে আর কেউ কোনদিন এ কাজ করতে সাহস না পায়। সেটা ফাঁসি হোক। আমরা রাজ্য সরকার ফাঁসির পক্ষে এবং এ তদন্তের অগ্রগতিতে রাজ্য পুলিশ সমস্ত ভাবে সিবিআইকে সাহায্য করবে।
অপরদিকে মৃত ছাত্রীর বাবা নিজের বাড়ি থেকে বলছেন, আমি সমস্তটাই দেখতে পাচ্ছি। সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। কারণ এটি বিচারাধীন বিষয়। আমি একজন মেয়েকে হারিয়েছি, কিন্তু লাখ লাখ মেয়েকে পেয়েছি। আমার লাখ লাখ ছেলে মেয়ে রাস্তায় নেমেছে সুবিচারের আশায়।
এছাড়া এদিন সকাল হতেই বিচারের দাবিতে একাধিক বাম দলগুলো কর্মসূচি নেয়। তারা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী বাসভবন ঘেরাও উদ্দেশে মিছিল করে। তবে বাসভবনের কিছুটা দূরেই হাজরা মোড়ে পুলিশ বাধা দিতেই গেলেই চলে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি।
একইভাবে পথে নামে বিজেপি। এক দফার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগে সকালে ধরনা অবস্থানে বসে কলকাতার শ্যামবাজারে। পুলিশের সঙ্গে তুমুল ধ্বস্তিতে গ্রেপ্তার হয় বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, অগ্নি মিত্রা পাল, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষসহ অনেকে। সন্ধ্যায় বিজেপির নারী বাহিনী মশাল মিছিল করে। তারাও মমতা বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রসদন থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতেই চলে ধ্বস্তাধস্তি। সব মিলিয়ে শুক্রবারও দিনভর উত্তপ্ত ছিল গোটা কলকাতা।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২৪
ভিএস/আরবি