চা-কে ইংরেজিতে ‘টি’ (Tea) বলা হয়। এই ‘টি’-এর নামকরণ হয় গ্রিকদেবী ‘থিয়া’র (Thea) নামানুসারে।
প্রাচীনকালে চীনাদের বিশ্বাস ছিলো ‘চা’ রোগ নিরাময়ের এক মহৌষধ। এরপর চীনা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ব্যবসার কারণে চায়ের পাতা ও বীজ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই অন্য দেশেও চায়ের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে। চীনের পাশাপাশি জাপানেও এই পানীয়ের কদর বাড়তে থাকে। তবে তখনও ছিল কেবল গ্রিন টি রূপে। এখনকার মতো ব্ল্যাক টি’র আবিষ্কার তখনও হয়নি। প্রায় ১৬০০ সালে জাপানে এই চায়ের খোঁজ পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে দেশ থেকে ব্রিটেনের রানীর জন্য উপহার হিসেবে চা নিয়ে আসে কোম্পানির কর্তারা। এরপর শুরু হয় চায়ের একচেটিয়া বাণিজ্য। ইংরেজদের হাত ধরেই বঙ্গদেশে আসে চা। চীনের পাশাপাশি ভারতেও শুরু হয় চায়ের চাষ। এরপর ইংরেজরা ব্যবসার উদ্যোগে টানা ১০ বছর ভারতীয়দের বিনা পয়সায় চা পান করায়। অনেকটা বিনা পয়সায় আফিম বিলির মতো। এরপর বাকিটা ইতিহাস!
বর্তমানে ভারতে হরেক রকম চায়ের প্রচলন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রঙ চা পান করলে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ কমে যায়। এছাড়া স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে বেশ কয়েকগুণ। বর্তমানে কলকাতায় রং চায়ের পরিবর্তে গ্রিন টি বেশি গ্রহণযোগ্য। মেদ কমাতেও চায়ের জুড়ি মেলা ভার। তবে তা পান করতে হয় নিয়ম করে।
যদিও অনেক গবেষকের দাবি, গ্রিন টি একই বংশের হলেও একে ঠিক চায়ের গোত্রে ফেলা যায় না। অনেক পরে এটি কলকাতায় পানীয়তে পরিণত হয়েছে। এখন চায়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে ফিউশন। যেমন-দার্জিলিং চায়ের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে আসাম চা। কোথাও চায়ের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে চকলেট, কখনও অরেঞ্জ। পরিবর্তন এসেছে চা-পানের পাত্রেও। কাপ, গ্লাস বা মাটির ভাড়ে এসেছে ভিন্নতা। চায়ের স্বাদকে আকর্ষণীয় করতে চলছে লাগাতার পরিকল্পনা।
কলকাতার রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, হাসপাতাল, মল, লেক, পার্ক, স্কুল, অফিস পাড়া, অলিগলি থেকে রাজপথ সবখানেই আছে চায়ের দোকান। চায়ের উনুনে আগুন জ্বলছেই। ইদানীং উনুনের বদলে জায়গা নিয়েছে গ্যাসের চুলা। অ্যালুমিনিয়াম বা স্টিলের বড় পাত্রে সর ভাসা গরু বা মোষের দুধ, বড় প্যানে চা-চিনি-দুধ পড়ছে অবিরাম। দোকানের সামনে রয়েছে নড়বড়ে বেঞ্চ, চেয়ার আর টেবিল। অন্তত একটি খবরের কাগজ থাকবেই দোকানগুলোতে। এক একটা পাতা এক একজনের হাতে। সকাল থেকে সন্ধ্যে নেতিয়ে পড়েছে খবরের কাগজের পাতা। তবু নিস্তার নেই। চায়ের দোকান এবং খবরের কাগজ যেন গরিব ও মধ্যবিত্তের ভার্সিটি! রাজনৈতিক মতভেদ. সংলাপ, সাহিত্য, দেশের হাল হকিকত সব ধরনের খবর চায়ের দোকানে কান পাতলেই শোনা যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চা পানে উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ভুল তথ্যও পাওয়া যায়। যেমন- চা খেলে রাতে ঘুম আসে না, চা পানে লিভারের ক্ষতি হয়, চা পানের ফলে গায়ের চামড়া কালো হয়। কিন্তু চা পানে কোনোভাবেই ত্বক কালো হয় না বরং ত্বকের চকচকে ভাব বজায় থাকে। তবে চা পানের ফলে লিভারের ক্ষতি না হলেও অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি হওয়া মানুষের দিনে একবারের বেশি চা পান করা উচিৎ নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
ভিএস/আরআর