নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। জেলায় জেলায় যোগাযোগ করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন রাজ্য-পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১হাজার ৭শ ৩২ জনকে সতর্কতামূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১শ ৯৯ জনকে নির্দিষ্ট কেসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামিন-অযোগ্য ধারা কার্যকর করা হয়েছে ৪শ ৭৫ জনের বিরুদ্ধে। ১৫টি বোমা, আটটি অস্ত্র এবং নয়টি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে।
তবে দেরিতে হলেও ঘুম ভাঙল পশ্চিমবঙ্গের শাসক প্রশাসনের। জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নকে ঘিরে অস্ত্রের দাপাদাপিতে রীতিমতো অসন্তুষ্ট নবান্নের কর্তারা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপার ও কমিশনারেটের কর্তাদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে, রাজনৈতিক রঙ না দেখে যে কোনওভাবেই হোক আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে। উদ্ধার করতে হবে মজুত করা বোমাও, যাতে কোনওভাবেই অশান্তি আর না বাড়ে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশমন্ত্রী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী অধিকাংশ জায়গায় শাসকদলের হাতে আক্রান্ত বিরোধীরা, এমন অভিযোগই বেশি। এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি বাড়বে, তা আগাম আঁচ করতে পারেননি পুলিশের কর্তারা। এখন তারই মাশুল দিতে হচ্ছে। কয়েকটি জেলায় খোঁজ মিলেছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার। তারপরেও সেভাবে সতর্ক হননি জেলার দায়িত্বে থাকা বেশিরভাগ সচিব বা কর্মকর্তা। চোরাগুপ্তা পথে যে দেদারসে অস্ত্র ঢুকতে পারে, তা নিয়েও তারা কোনও হোমওয়ার্ক পর্যন্ত করেননি। সেই সুযোগই নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, প্রথমদিকে পুলিশের পরিকল্পনায় গলদ ছিল। তবে তাঁর বক্তব্য, পরিস্থিতি যে নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে, এমনটা তারা আঁচ করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ পুলিশের শীর্ষকর্তাদের অনেকেই। তাই তাদের ঘুম ভেঙেছে দেরিতে। দেরিতে হলেও এনিয়ে রাজ্য পুলিশের কর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছেন।
যে যে জেলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীদের দাপট দেখা যাচ্ছে, তারও একটা তালিকা তৈরি করেছেন তাঁরা। তবে অন্যান্য জেলাকেও তাঁরা খাটো করে দেখছেন না। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে। সেই মতোই নবান্ন থেকে নির্দেশ গিয়েছে পুলিশ সুপারদের কাছে। বলা হয়েছে, এবার মাঠে নেমে কাজ করুন। রাজনৈতিক রঙ দেখে বাছবিচার না করার নির্দেশ গিয়েছে তাঁদের কাছে। বলা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রসহ কাউকে দেখলেই যেন তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করা হয়। কোথায় আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করা হয়েছে, তার তথ্য জোগাড় করে দ্রুত তল্লাশি চালানোর নির্দেশ গিয়েছে জেলায় জেলায়।
যদি সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা আসে, তাহলে তাও নবান্নকে জানাতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে শাসকদলকেও রেয়াত করা হবে না, নির্দেশ এমনই। তবে জেলা সুপারদের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে চাইছে না নবান্ন। তাঁরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, তার উপর সরাসরি নজরদারি থাকবে নবান্নের।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
ভিএস/জেএম