শুধু তাই নয় রাজ্য সরকারের নির্দেশনামা অনুযায়ী, এসব নার্সরা বেতনের ক্ষেত্রেও ডাক্তারদের সমান মর্যাদা পাবেন। অর্থাৎ একজন সরকারি ডাক্তার মাস গেলে যা বেতন পান, তারা সেই স্কেলেই বেতন পাবেন।
কোর্সের নাম ‘অ্যাডভান্সড নার্স প্র্যাকটিশনার্স’। এই পাঠ্যক্রম দু’বছর পড়ার পর উত্তীর্ণ হলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় সুযোগ পাবেন তারা।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুন মাস থেকেই কলকাতার তিনটি মেডিকেল কলেজ-হাসপাতালে এই কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। কলকাতার মেডিকেল কলেজ, পিজি এবং আরজিকর মেডিকেল কলেজে মোট ১২০টি আসনে এই কোর্স পড়ানো হবে। পরে আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তবে ইচ্ছুকদের ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কিছু শর্ত থাকবে। শর্ত হলো- পাঠ্যক্রমে ঢোকার আগেই বন্ডে সই করতে হবে। বন্ডে বলা থাকবে, এই কোর্সে ভর্তি হলে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতেই হবে, চাকরি ছাড়া যাবে না। কেউ যদি মাঝপথে চাকরি ছাড়েন, তাহলে চিকিৎসকদের মতোই মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে।
নাম না প্রকাশে শর্তে এক পদস্থ সরকারি নার্স বলেন, সরকার বিনা পয়সায় পড়াবে। পাস করলে উচ্চপদে চাকরি দেবে, ডাক্তারদের সমান বেতন দেবে, মর্যাদা দেবে। আর সেই নার্স মাঝপথে চাকরি ছেড়ে চলে যাবে সেটা সরকার কখনই বরদাস্ত করবে না। অপর শর্ত হলো, গ্রামাঞ্চলে পোস্টিং হবে।
এই অ্যাডভান্সড নার্সের কাজের ক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে ওই নার্স জানান, ওই কোর্স পড়াতেও তো পরে লোক লাগবে। শিক্ষিকার প্রয়োজন। চাকরি করতে করতে সেই পদে উন্নতির সুযোগ থাকবে।
প্রসঙ্গত, মমতা ক্ষমতায় আসার পর এর আগেও একবার এ ধরনের অ্যাডভান্সড নার্সিং কোর্স চালু করেছিলেন। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার তাই গুছিয়ে হোমওয়ার্ক করে নতুনভাবে চালু করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তবে এর অনুমোদন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নয়, দেবে হেলথ এডুকেশন ইংল্যান্ড। বর্তমানে হেলথ এডুকেশন ইংল্যান্ড এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নার্সিং শাখা যৌথভাবে এটি তৈরি করছে। ইংল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষকরা আসছেন। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের প্রশিক্ষিত ট্রেনাররা।
নার্সদের এই হাইটেক কোর্স নিয়ে ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরর্স ফোরামের সভাপতি ডা. রেজাউল করিম বলেন, আমরা এমবিবিএস ছাড়া ডাক্তারের সমান কোনো পাঠ্যক্রমের বিরোধী। এসব নার্স বড়জোর মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, প্রিভেনটিভ হেলথ ইত্যাদি বিষয়গুলি দেখভাল করতে পারেন। বোঝাই যাচ্ছে, গ্রামে ডাক্তারের সঙ্কট ঘোচাতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, এসব করতে গিয়ে যেন গ্রামের মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত বা প্রতারিত না হন।
সিপিএমের ডাক্তার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরর্স-এর রাজ্য সম্পাদক ডা. মানস গুমটা বলেন, এসব হাস্যকর চিন্তাভাবনা। এমবিবিএস ছাড়া অন্য কোনও পাঠ্যক্রম পড়ে ডাক্তারি করা যায় না।
অন্যদিকে তৃণমূলপন্থী ডাক্তার সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশনের ডা. নির্মল মাজি বলেন, সব সময়ই আমরা নার্সদের উন্নত প্রশিক্ষণের পক্ষে। তবে সমতুল্য বেতনের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮
ভিএস/আরআর