ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমন্ত্রণে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে সমাবর্তনে যোগ দেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৫ মে) স্থানীয় সময় পৌনে ১১টায় শুরু হয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত।
সমাবর্তনে নরেন্দ্র মোদী বলেন, এটি এমন একটি কনভোকেশন, যেখানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত আছেন। ভারত ও বাংলাদেশ আলাদা, দুটি দেশ। কিন্তু আমাদের একে অপরের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার ক্ষেত্র জড়িত।
মোদি বলেন, আমরা একে অপরের কাছ থেকে সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক কিছু শিখতে পারি। তার একটা বড় উদাহরণ শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করা।
সকাল ১০টায় শান্তিনিকেতনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন। এরপর শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সমাবর্তন উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা চাদরে ঘেরা বিশ্বভারতীকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। সমাবর্তন মঞ্চ সাজানো হয়েছে হস্তশিল্পের কারুকাজের কাঠ দিয়ে, রঙ ব্যবহার করে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য।
ঐতিহ্য অনুযায়ী ডিগ্রিপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট দেয়া হয় ছাতিম পাতায়।
সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি সঙ্গে হলুদ উত্তরীয় পরে ছাত্ররা এবং হলুদ পাড়ের সাদা শাড়ি পরে সমাবর্তনে অংশ নেন ছাত্রীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সফরে শান্তিনিকেতনে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবনের’ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত ছিলেন।
এ ভবনে নির্মিত হয়েছে আধুনিক থিয়েটার, প্রদর্শনী কক্ষ ও বিশাল লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরিতে রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পর্কিত গ্রন্থ।
এছাড়া ভবনের প্রবেশ দ্বারের দুই প্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে।
ভবন উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা ফিরে এসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
শনিবার (২৬ মে) প্রধানমন্ত্রী আসানসোলে যাবেন। সেখানে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। পরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেবেন।
অনুষ্ঠানে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও শিক্ষামন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে নেতাজী সুবাস বসু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার রাতে দেশে ফিরবেন।
এর আগে সকালে দুই দিনের সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে কলকাতায় নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তরে বীরভূম জেলার বোলপুর শান্তিনিকেতনে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মসিউর রহমান, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।
কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান খান, নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিশিষ্ট ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা দীপু মনি ও শেখ হেলাল উদ্দিন, অসীম কুমার উকিল, এসএম কামাল, শামসুন্নাহার চাঁপা, পারভিন জামান কল্পনা, যুবলীগ নেতা অপু উকিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
এসকে/এমইউএম/এসএইচ