এদিক - ওদিক চাহুনি। ইফতার কেনার সুযোগ পায়নি সে।
আমার মত লক্ষ্য করেছেন উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন। ছুটে এসে ধরিয়ে দিলেন সরবত আর বললেন, ভাই রোযা হ্যায়? জ্বি। খেজুর খতম হো গ্যায়া, কেলা (কলা) লিজিয়ে। ম্যায় ভি কেলা সে আফতার (ইফতার) করুঙ্গী। ইহাপে ব্যাট যাইয়ে। উদ্যোক্তা নিজেও একজন বিক্রেতা। সম্প্রীতি কলকাতায় আজও বিরাজমান।
আরবি ভাষায় ইফতারের শব্দ ফাতর। এর অর্থ রোযা ভঙ্গ করা। ফিতর আরো যে অর্থ আছে তা হলো এমন খাদ্য যা দ্বারা রোযা ভঙ্গ করা হয়। অর্থাৎ ইফতার অর্থ রোযা ভাঙার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা। হাদীস থেকে এও জানা যায়, রসূল (সা.) ইফতারিতে খেজুর খেতেন। তিনি ভালো মানের খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তিনি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনো খেজুর ইফতারে রাখতেন।
বিধান বলছে, খেজুর দিয়ে ইফতার করা সর্বোত্তম। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তাহলে পানি দিয়েও ইফতার করা যায়, এটাও সুন্নাত। আবার সফরে বা যানবাহনে ইফতারের সময় হলো কিন্তু হাতের সামনে খাবার পেলো না তাহলে মানসিকভাব রোযা ছাড়ার নিয়ত করা যেতে পারে। পরে যে কোনো হালাল খাবার বা পান করলেও সমস্যা নেই।
তবে যেখানে এখনো সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে সম্প্রীতি বিরাজ করছে সেখানে সফরে মানসিকভাব রোযা ছাড়ার নিয়ত করতে হয় না। এমনই ছবি উঠে এলো কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে। দিনের সিয়াম সাধনার শেষে যাতে সুষ্ঠুভাবে ইফতার করতে পারে সে কারণে নিউমার্কেট লাগোয়া হগ মার্কেট ও সিমপার্ক মল হর্কাস ইউনিয়ন সাত বছর ধরে আজও সেই সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছেন।
যারা দেখেছেন তারা জানেন হক মার্কেটের সামনে বিশাল একটা বাধানো চত্বর আছে। যার নিচে আছে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা। সেই পার্কিং -এর উপরে বাধানো বারান্দায় হর্কাস ইউনিয়ান সাত বছর ধরে ইফতারের জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। ব্যবস্থা বলতে থাকে দুধ আর রুয়াবজা দিয়ে ঠান্ডা সরবত। আর থাকে পানির ব্যবস্থা। বাকি চত্বরটায় থাকে বসার ব্যসস্থা। কখনও চেয়ার টেবিল পেতে। আবার লোকবল কম থাকলে তা পাতা হয় না। তবে তথনও সেখানে যাতে বসে সবাই সুষ্ঠুভাবে ইফতার করতে পারেন থাকে সেই ব্যবস্থাও।
রোযার দিনগুলোয় গোটা নিউমার্কেট এলাকা অস্থায়ী দোকানে ভরে যায়। বিক্রি হয় ইফতারের নানা সরঞ্জাম। ঠান্ডা সরবত থেকে শুরু করে ভাজাভুজি, বুটমাখা, মুরি থেকে মিষ্টি, ফল থেকে ফিরনি। কোনো কিছুই বাদ পরে না এই দিনগুলোয়। সকাল থেকে রাত দশটা-এগারোটা অব্দি খোলা থাকে নিউমার্কেটে সব ধরনের দোকানগুলো।
এখানেই শেষ না সম্প্রীতি। ইফতারের সময় মার্কেট লাগোয়া রেস্তরাঁগুলো খোলা থাকলেও ব্যবসা বন্ধ থাকে প্রায় মিনিট ত্রিশের মত। সেখানে রোযাদাররা ইফতার নিয়ে সটান বসে পড়তে পারে রেস্তোরার ভিতর। রেস্তোরার খাবার যদি কেনার পকেটের পারমিট না করে তাতেও সমস্যা নেই। সে বিষয়ে একটি কটুক্তিও ব্যয় করবে না তারা। কেনাকাটর ফাকে দেখা গেল অনেকেই এই সুযোগ নিয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় আজও যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে এগুলো তার উদাহরন মাত্র।
তথ্য বলছে, গোটা বঙ্গে কমবেশি এগারো কোটি মানুষের বসবাস। তার মধ্যে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ বাস করেন কলকাতায়। পরিসংখ্যান এও বলছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায় বাস করে ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গোটা এশিয়া মহাদেশ যখন সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান বারেবারে জানাচ্ছে, সেখানে কলকাতা আজও সম্প্রীতির মূল পীঠস্থান বলা যেতেই পারে। তাই এটাই সম্প্রীতির কলকাতা। যেখানে আজও বিরাজ করে ‘ধর্ম যার যার - উৎসব সবার। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, ১৮জুলাই, ২০১৮
আরএ