শনিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে কলকাতার ধর্মতলার পাশে মেয়ো রোডে বিজেপির যুব মোর্চা আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আসাম সরকারের সম্প্রতি প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জীতে সেখানকার মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের জায়গা হয়।
কেন্দ্রীয় দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী বা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূলের প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়রা এই তালিকাকে ‘ভোটের রাজনীতির অংশ’ এবং ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে নিন্দা করলেও সাফাই গেয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘১৯৯৫ সালে কংগ্রেস আসামের এনআরসি ইস্যুতে সমর্থন জানিয়েছিল, এখন রাহুল তার বিরোধিতা করছেন। সব জেনে রাহুল গান্ধী অভিনয় করছেন। সবাইকে বুঝতে হবে, অনুপ্রবেশ আর শরণার্থীর বিষয়টা। অনুপ্রবেশ যতো বাড়বে রাজ্যের লোকের কর্মসংস্থান ভাগ হয়ে যাবে। তাই এনআরসি হবেই। ’
‘দিদি, রাহুল গান্ধী যতোই এনআরসির বিরোধিতা করুন, এনআরসি হবেই। আজ দিদি অনুপ্রবেশকে মদত দিচ্ছেন। কিন্তু ২০০৫ সালে সিপিএমের জমানায় লোকসভায় এই অনুপ্রবেশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন তিনি। এমনকি লোকসভার অধ্যক্ষের মুখে কাগজ ছুড়ে মেরেছিলেন। তখন দিদির অভিযোগ ছিল, বামেরা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ভোট ব্যাংক বাড়াচ্ছে। আজ দিদি ক্ষমতায় এসে সব ভুলে গেলেন। ’ বলেন বিজেপি সভাপতি।
তৃণমূলকে উৎখাত করেই ছাড়বো
দিন বিশেক আগে ঠিক এই মেয়ো রোডে তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত সমাবেশে মমতা বন্দোপাধ্যায় বিজেপিবিরোধী শক্তিদের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এক হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। সেখানেই বিজেপির যুব মোর্চার সমাবেশে অমিত শাহ পাল্টা দলের কর্মী-সমর্থকদের বলেন, সামনের নির্বাচনেই পশ্চিমবঙ্গে পদ্মফুল ফোটাতে হবে। রাজ্য সরকারের মসনদ থেকেও তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দেন তিনি।
দেশের ১৯ রাজ্যে সরকার চালানো বিজেপির প্রধান অমিত শাহ বলেন, ‘আপনারা রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএমের শাসনকাল দেখেছেন এবং তৃণমূলকে দেখছেন। পশ্চিমবঙ্গে একফোঁটাও উন্নত হয়নি। একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে সুযোগ দিন। পশ্চিমবাংলা সোনার পশ্চিমবাংলা হবে। আমি বিমানবন্দরে নেমে দেখি ‘বিজেপি গো ব্যাক’ ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে দিদির কর্মীরা। আমি বাংলাবিরোধী নই। এই বাংলার মাটিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জন্ম। আর তিনিই আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা। তো আমি কী করে বাংলাবিরোধী হই? আমি বাংলাবিরোধী নই, আমি দিদিবিরোধী। ’
বিজেপি প্রধান বলেন, ‘এক সময় এ রাজ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতো ঘরে ঘরে। আজ বোমার শব্দ চারিদিকে। জেএমবিরা এখানে বোমা তৈরি করার সাহস পাচ্ছে। সে বোমা প্রতিবেশি বাংলাদেশে ফাটছে। এটা রাজ্য চলছে? রাজ্যে কারখানা নেই, মেধাবীরা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। রাজ্যের ঋণ আরও বেড়েছে দিদির আমলে। কেন্দ্র যে টাকা দেয় রাজ্যকে, তা খরচ করতে পারছেন না, টাকা আবার ফিরে যাচ্ছে দিল্লিতে। আমরা হিন্দু-মুসলমানের ভাগ করছি না। বিভাজনের খেলায় মুখ্যমন্ত্রীই নেমেছেন। ’
পশ্চিমবঙ্গ বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে অমিত শাহ বলেন, ‘ভারতের ১৯টি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। যতোদিন না বাংলা জয় হবে, ততোদিন বিজেপির বিজয়রথ থামবে না। শ্যামাপ্রসাদের রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে চাই আমরা। আমি সব জেলায় যাবো। প্রচার করবো। তৃণমূলকে উৎখাত করেই ছাড়বো। ’
দলীয় কর্মীদের অমিত শাহ নির্দেশনা দেন, ‘মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করুন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে লোকসভার ২২টি আসন নিশ্চিত করতে হবে। তারপর ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিবঙ্গে ক্ষমতায় আসবো আমরা। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৮
ভিএস/এইচএ/