জানা যায়, বহুদিন ধরে বিভিন্ন কায়দায় বিহার থেকে বঙ্গে অস্ত্র আমদানি হয়। এ কারণে দুই রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশ আগের থেকে নজরদারি বাড়ায়।
সাধারণত বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে মাছ আসে না। তবে গণপরিবহন বা বাসে করে একটি বা দু’টি মাছের বাক্স এলে কেউ সন্দেহ করে না। রাতের দিকে বিহার থেকে অনেক বাসই আসানসোলে আসে। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ীরা।
সবার নজর এড়িয়ে মাছের বাক্সের ভেতর করে আনা অস্ত্র আসানসোলের কোনো একটি জায়গায় নামানো হয়। তারপর আসানসোল থেকে তা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে তারা।
সাধারণত মুঙ্গের থেকে ‘সাদা ও কালো’ এই দুই ধরনের মাউজার পিস্তল পশ্চিমবঙ্গে আসছে। কালো মাউজারে থাকে ৯টি গুলি। এগুলোর দাম হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার রুপি। সাদা মাউজারে ১১টি গুলি থাকে এবং দাম ৫০ থেকে ৫৫ হাজার। তবে আসানসোলে নামার পর দূরত্ব অনুযায়ী এই দাম ওঠানামা করে। আসানসোলের আশেপাশে এই দামেই মাউজারগুলি বিক্রি হয়। আবার কলকাতা বা রাজ্যের অন্য কোথাও গিয়ে দাম বেশি পড়ে।
পুলিস সূত্র বলছে, আসানসোলে আট থেকে ১০টি দল অস্ত্র সরবরাহ করে। তারা বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে। কয়েকজন লাইন বদলালেও অনেকেই এখনও ওই পেশাতে রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে মুঙ্গেরের কারিগররা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এসে নাইন এমএম বা সেভেন এমএম জাতীয় পিস্তল তৈরি করলেও, তবে মুঙ্গেরের কারখানায় তৈরি মাউজারের কদর অন্য রকম। এগুলো দেখতেও আলাদা। ছোট সাইজের এই পিস্তল পকেটে রাখলে তা কারও মনে সন্দেহ জাগায় না। পাশাপাশি এই জাতীয় মাউজারের গুণগত মানও বিদেশি অস্ত্রর মত।
দুই অস্ত্র ব্যবসায়ী মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) বাইকে আসানসোল থেকে পিস্তল নিয়ে দুর্গাপুরের বিক্রি করতে যাচ্ছিল। টহলরত পুলিশের গাড়ি সন্দেহবশত তাদের জেরা করে তখনই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তকারীরা আরও কয়েকজন কারবারির নাম জানতে পারেন। পাশাপাশি বেআইনি অস্ত্রের রুটেরও সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কারবারিদের মধ্যে একজন আসানসোল এলাকায় ও অন্যজন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। ওই দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, আমরা রাতের ট্রাক বা লরিগুলোর দিকে বেশি নজর রাখতাম। সাধারণত বিহারি বাসযাত্রী বিহার থেকে এ রাজ্যে আসার সময় খাওয়ার জন্য বরফে ঢেকে কিছু মাছ বা সবজি নিয়ে আসে। তাই তাদের খুব একটা সন্দেহের চোখে রাখা হতো না। এ কারণে রাতের বাসগুলোতে তেমন কঠোর চেকিং হত না। এখন সেই সুযোগটাই অস্ত্র কারবারিরা কাজে লাগাচ্ছে। মাছের বাক্স ছাড়াও বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে লুকিয়েও আগ্নেয়াস্ত্র আনে তারা।
তিনি আরও জানান, আটক দুইজনকে জেরা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৮
ভিএস/এনএইচটি